Bangla Software- Bijoy

ভালোবাসারও যত্ন চাই

৫০ বছরের দাম্পত্যজীবনে আবদুল হাই খান ও আয়েশা খানমের যে ঝগড়াঝাঁটি হয়নি, তা নয়। দীর্ঘ এই পথ পাড়ি দিতে কত চড়াই-উতরাই যে পেরোতে হয়েছে। কখনো মনোমালিন্য, আর্থিক কষ্ট, কখনো কর্মসূত্রে দূরে থাকা, পাওয়া না পাওয়ার হিসাবটা অনেক সময়ই মেলেনি। তবে একটা সুতা যেন শক্ত করে গিঁট বেঁধে ছিল সম্পর্কটাতে। তাই এত বছর পার হলেও ঘরভর্তি নাতিনাতনির মধ্যেও আলাদা করে মমতা দেখান দুজন দুজনকে। এখনো প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে গাছের সবচেয়ে ডাসা ও পাকা দুটো বরই তুলে এনে ঘুমন্ত স্ত্রীর খাটের পাশে রেখে দেন আবদুল হাই খান—সবার অলক্ষ্যে। একবার দুষ্টু নাতনি দেখে ফেলল ঘটনাটি। ‘নানাভাই আমাদের না দিয়ে নানিকে কেন দিলেন’—জানতে চাইলে একগাল হেসে আবদুল হাই বলেন, ‘ছোট্ট খুকিকে ঘরে এনেছিলাম। পাকা বরই খেতে ভালোবাসত।’

এভাবেই যত্নে রাখতে হয় ভালোবাসাগুলো। ঘরের সবচেয়ে দামি জিনিসটি যেমন যত্নে রাখা হয়, তেমনি মনের সবচেয়ে দামি জিনিস ভালোবাসারও একটু যত্নের প্রয়োজন পড়ে। আসলে সম্পর্ক হচ্ছে গাছের চারার মতো। চারার যেমন যত্ন নিতে হয়, সম্পর্কেরও তেমনি। না হলে গাছের মতো সম্পর্কও মরে যায়। ইংলিশ লেখক টমাস ফুলারের একটি বিখ্যাত উক্তি আছে, ‘ভালোবাসতে শেখো, ভালোবাসা দিতে শেখো, তাহলে তোমার জীবনে ভালোবাসার অভাব হবে না।’ অনেকেই বলেন, ‘ব্যস্ত জীবনে পরিবার, সংসার, সন্তান পালন, আয়ব্যয়ের হিসাব মেলাতে গিয়ে ভালোবাসা দৌড়ে পালায়। ভালোবাসি বলেই তো সব করি। আলাদা করে ভালোবাসার সময় কই?’ আসলে সারা দিন ভালোবাসি-ভালোবাসি বলার প্রয়োজন পড়ে না, ছোট ছোট কাজ দিয়েই প্রকাশ করা যায় সঙ্গীকে কতটা ভালোবাসি। ছোট ছোট ভালো-মন্দ অনুভূতির গুরুত্ব দেওয়া, প্রচণ্ড ব্যস্ততার মধ্যেও অল্প একটু সময় বের করে সঙ্গীর খোঁজ নেওয়া, ছুটির দিন ঘরের সব কাজ শেষে একসঙ্গে বসে চা খাওয়া, ঘর থেকে বের হওয়ার সময় ছোট্ট করে বিদায় জানানো, বিপদে শুধু চুপ করে পাশে থাকাটাও অনেক কিছু প্রকাশ করে।
একে অপরকে শ্রদ্ধা
সঙ্গীকে শ্রদ্ধা করুন। দুজন মানুষ আলাদা সত্তা, এক করে মেলানো ঠিক নয়। সঙ্গীর মতের সঙ্গে সব সময় আপনার মতের মিল না–ও হতে পারে। প্রেমিক-প্রেমিকা হোক, স্বামী-স্ত্রী, বন্ধু এমনকি মা-বাবা ও সন্তানের মধ্যেও মতবিনিময়ে অমিল হতে পারে। তাই বলে নিজের মতামত সঙ্গীর ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। পরামর্শ দিতে পারেন, হয়তো ঠিক মনে হচ্ছে না, সেটাও সুন্দর করে বুঝিয়ে বলতে পারেন। তবে তিরস্কার করবেন না কখনোই। 
রায়হান ও সোমা দুজনই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ব্যস্ততার সীমা নেই। আজকাল কেবল সন্তানের দরকার-অদরকার নিয়েই কথা হয় এই দম্পতির মধ্যে। কীভাবে যে দূরত্ব আসছে, নিজেরাও টের পাচ্ছেন না। প্রায়ই কাজের সময় হঠাৎ করে রায়হানকে ফোন দেন সোমা। ব্যস্ত রায়হান বেশির ভাগ সময়ই ফোনটা কেটে দেন। এ ক্ষেত্রে বলতে হয় সঙ্গীর কথা শুনুন। হয়তো সে প্রয়োজনীয় কথা বলছে না, সব সময়ই যে কথা প্রয়োজনেই হবে, এমনটা কিন্তু ভালোবাসার নিয়ম নয়। যে অনুভূতিটি তিনি প্রকাশ করতে চাইছেন, সেটি বোঝার চেষ্টা করুন। 

সুন্দর ব্যবহার
সব সম্পর্কেরই ঝগড়াঝাঁটি হয়। এটাই স্বাভাবিক। তবে প্রায়ই দেখা যায়, রেগে গিয়ে একে অপরকে কঠিন কথা শুনিয়ে ফেলে মানুষ। উল্টোপাল্টা আচরণ করে বসে। এটাই মনে একটা দীর্ঘস্থায়ী ছাপ ফেলে। এসব ক্ষেত্রে রাগ নিয়ন্ত্রণ করে পরে সঙ্গীর ভুলটা বুঝিয়ে ধরিয়ে দেওয়া যায়। 
আচরণে কৃত্রিমতা নয়
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খুব প্রকাশ করছি ভালোবাসা, একসঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল ছবি। অথচ দুজনের সম্পর্কে যোজন যোজন দূরত্ব। মানুষের সামনে হয়তো বলছি সঙ্গীকে ছাড়া চলেই না, অথচ সঙ্গীর সামান্য চাওয়াটাও পূরণ করছি না। বাইরের মানুষের সামনে ভালোবাসার উদাহরণ অথচ ভেতরে একে অপরের আবেগে দিই না মর্যাদা, জীবনে এসব কৃত্রিমতা না থাকাই ভালো। 
একান্তে কিছু সময় কাটান
ব্যস্ত জীবনে একে অন্যকে দেওয়ার সময় কোথায় আমাদের। সন্তান, সংসারের জাঁতাকলে জীবন অতিষ্ঠ। তবে এর মধ্যেই প্রিয়জনের জন্য কিছু সময় আলাদা করে বরাদ্দ রাখতে হবে। হতে পারে সকালে দুজন একসঙ্গে কফি খাওয়া। নয়তো রাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে কয়েক মিনিটের আলাপন। সে যে আপনার জীবনের বিশেষ কেউ, এটা সঙ্গীকে বুঝিয়ে দিন। অবসর সময়ে মুঠোফোনে চোখ আটকে না রেখে পাশে থাকা মানুষটার সঙ্গে কোনো কিছু নিয়ে কথা বলুন। আপনি আছেন সব সময়, এই ভরসাটুকু যেন সঙ্গী আপনার কাছ থেকে পায়। 
ঘুরতে যাওয়া যায় বাইরে কোথাও
জীবনে টেনশন থাকে, ক্লান্তি থাকে—সবকিছু নিয়েও পরিবারের সঙ্গে অসাধারণ সময় কাটানো যায়, দায়িত্ব পালন করা যায়, বাচ্চাদের শখ পূরণ করা যায়, আনন্দ করা যায়। ভালোবাসার মানুষটাকে নিয়ে আলাদা করে ঘুরতে যাওয়া যায়। এ সবকিছুই যত্নে রাখে সম্পর্ককে। 
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন
সঙ্গী আপনাকে খুশি করতে কোনো উদ্যোগ নিলে হাসিমুখে তাকে স্বাগত জানান। বিশেষ কোনো খাবার রান্না করলে, কোনো কিছু উপহার দিলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। তাঁকে ধন্যবাদ জানান। তবে কখনোই সঙ্গীকে কারও সঙ্গে তুলনা করবেন না। অমুক এটা করে, তমুক তো তোমার মতো না। ও পারে তুমি কেন পারো না বলে সঙ্গীকে দোষারোপ করতে যাবেন না। সব সময়ই সঙ্গীর সহযাত্রী হওয়ার চেষ্টা করুন। শুধু সুখে নয়, দুঃখের দিনেও তাঁর পাশে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে দাঁড়ান। 
অলক্ষ্যে বদনাম নয়
সঙ্গীর নেতিবাচক দিকটি অন্যের কাছে তুলে ধরবেন না। হয়তো গল্পে গল্পেই কাউকে বলছেন। তবে সেটা সে জানতে পারলে যে কষ্ট পাবেন, তা সম্পর্কে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে। সেই সঙ্গে আজ যা বর্তমান, কাল তা–ই অতীত। তাই অতীতের ভুলত্রুটি আঁকড়ে ধরে রাখবেন না। সঙ্গীর অতীত নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি না করাই ভালো। বর্তমানের মানুষটাকে ভালোবাসুন। 
শাহেদ ও রিতুর ১০ বছরের সংসার। জানালেন, এই ১০ বছরে ভালোবাসা প্রকাশের জন্য খুব কষ্ট করে কিছু করার প্রয়োজন পড়েনি তাঁদের। এই দম্পতি মনে করেন, দামি উপহার দিয়ে যা হয় না, হয়তো ছোট্ট একটা অনুভূতিই তা প্রকাশ করে দেয়। যেমন যখনই শাহেদ ঘর থেকে বের হন বারান্দায় দাঁড়ান রিতু। শাহেদ বোঝেন, তাই সব সময় পেছন ফিরে তাকান, হাত নেড়ে একটু হাসেন। ছোট এই আদান-প্রদান চমৎকার করে দেয় তাঁদের জীবনটাকে।
 করোনাভাইরাসে প্রভাবিত কে–পপ

করোনাভাইরাসে প্রভাবিত কে–পপ

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। চীনের বাইরে দক্ষিণ কোরিয়াতে এখন কোভিড–১৯ নামের ভাইরাসটি উদ্বেগজনক হারে ছড়াচ্ছে। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ায় মোট সাতজন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এতে আক্রান্ত হয়েছে ৭৬০ জন। আর ৭ হাজার ৭০০ কোরীয় আছে কোয়ারেন্টাইনে। এই দুর্যোগের সময় বের হলো বিশ্বখ্যাত কে–পপ ব্যান্ড বিটিএসের নতুন অ্যালবাম ম্যাপ অব দ্য সোল: সেভেন। এমন এক অবস্থায় অ্যালবামটি নিয়ে বিটিএস–ভক্তদের কাছাকাছি যেতে পারছে না, বাতিল করছে জনসমাগমে প্রচার–প্রচারণা। শুধু বিটিএস নয়, দক্ষিণ কোরিয়ায় অন্য কে–পপ শিল্পী ও ব্যান্ডগুলো এড়িয়ে চলছে জনসমাগম। সবাই কনসার্ট ও অন্য সাংস্কৃতিক আয়োজন এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছে।

শিল্পী থাকবে, শ্রোতা নয়!

র‌্যাপার স্টোর্মজি বাতিল করেছেন তাঁর কনসার্টর‌্যাপার স্টোর্মজি বাতিল করেছেন তাঁর কনসার্টবিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। চীনের বাইরে দক্ষিণ কোরিয়াতে এখন কোভিড–১৯ নামের ভাইরাসটি উদ্বেগজনক হারে ছড়াচ্ছে। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ায় মোট সাতজন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এতে আক্রান্ত হয়েছে ৭৬০ জন। আর ৭ হাজার ৭০০ কোরীয় আছে কোয়ারেন্টাইনে। এই দুর্যোগের সময় বের হলো বিশ্বখ্যাত কে–পপ ব্যান্ড বিটিএসের নতুন অ্যালবাম ম্যাপ অব দ্য সোল: সেভেন। এমন এক অবস্থায় অ্যালবামটি নিয়ে বিটিএস–ভক্তদের কাছাকাছি যেতে পারছে না, বাতিল করছে জনসমাগমে প্রচার–প্রচারণা। শুধু বিটিএস নয়, দক্ষিণ কোরিয়ায় অন্য কে–পপ শিল্পী ও ব্যান্ডগুলো এড়িয়ে চলছে জনসমাগম। সবাই কনসার্ট ও অন্য সাংস্কৃতিক আয়োজন এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছে।
শিল্পী থাকবে, শ্রোতা নয়!
নিজেদের পরের কনসার্টে শ্রোতাদের আসতে বারণ করে দিয়েছে বিটিএস। এমনকি তারা সর্বশেষ অ্যালবাম ম্যাপ অব দ্য সোল: সেভেন–এর মুক্তি উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনও করেছে জনশূন্য মিলনায়তনে। ভার্চ্যুয়ালি সেই সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকেরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগ দিয়েছেন। নতুন অ্যালবাম প্রচারের জন্য কোরিয়ার সিওলে বেশ কিছু টিভি অনুষ্ঠানে বিটিএস সদস্যদের অংশ নেওয়ার কথা ছিল। সে অনুষ্ঠানে বিটিএস–আর্মি, অর্থাৎ বিটিএসের ভক্তদেরও থাকার কথা। তবে এক আনুষ্ঠানিক মেইলের মাধ্যমে বিটিএস সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে, কোভিড–১৯–এর সংক্রমণ এড়াতে ভক্তদের স্টুডিওতে না আসার অনুরোধ রইল। বিটিএস আরও জানায়, নিরাপত্তার কারণে কোনো দর্শক ছাড়াই প্রচারণার অনুষ্ঠানগুলোর দৃশ্য ধারণ হবে।
ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলন
সোমবার ম্যাপ অব দ্য সোল: সেভেন–এর মুক্তি উপলক্ষে কোরিয়ায় একটি সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে বিটিএস, তবে সেটা ভার্চ্যুয়ালি। আগে থেকেই সাংবাদিকদের কাছ থেকে সংগৃহীত প্রশ্নের উত্তর দেন বিটিএসের সদস্যরা। সেখানে তাঁরা জানান, কোনোভাবেই নিজেদের বা ভক্তদের স্বাস্থ্য নিয়ে কোনো ঝুঁকি নিতে চাইছে না বিটিএস।
‘আমরা এখন স্বাস্থ্যকেই সবচেয়ে এগিয়ে রাখছি। আর আমরা সব সময় নিজের সত্তা ও নিজেকে ভালোবাসার যে বার্তা সবাইকে দিয়েছি, সেটা করার জন্য আপনাকে অবশ্যই সুস্থ থাকতে হবে।’ ভক্তদের উদ্দেশে বিটিএসের সদস্য জিমিন এসব কথা বলেন।

এরই মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার দেশটির নাগরিকদের বাড়ির বাইরে বের হওয়ার ব্যাপারে এবং করোনাভাইরাসের ঝুঁকি এড়াতে বেশ কিছু নিয়ম আরোপ করেছে। বিটিএস সরকারের নির্দেশ মেনে চলার চেষ্টা করছে এবং মানুষের ভিড়ে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে নিজেদের ও ভক্তদের এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছে।
সংকটে দক্ষিণ কোরীয় বিনোদনমাধ্যম
দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় সংকটে পড়েছে দেশটির বিনোদনমাধ্যম। শুধু বিটিএস নয়, কোরিয়ার বিভিন্ন টিভি চ্যানেল তাদের নিজস্ব অনুষ্ঠানে অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো বন্ধ করে দিয়েছে। অনেক কে–পপ দল বাতিল করে দিয়েছে কনসার্ট ও ভক্তদের সঙ্গে সাক্ষাৎ অনুষ্ঠান।
এশীয় বিনোদনে করোনার প্রভাব
শুধু দক্ষিণ কোরিয়ার বিনোদনমাধ্যমই নয়, করোনাভাইরাসের কারণে আক্রান্ত হচ্ছে পুরো এশিয়ার বিনোদন ব্যবসা। সংগীতের অনেক বড় তারকারা তাঁদের আসন্ন এশীয় কনসার্ট করোনাভাইরাসের ভয়ে বাতিল করে দিচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে আছেন মার্কিন র​্যাপার স্টোর্মজি। সাংহাই, হংকং, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় তাঁর গাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার ভয়ে ট্যুর বাতিল করে দিয়েছেন তিনি।
সম্প্রতি চীনে জেমস বন্ডের নতুন চলচ্চিত্র নো টাইম টু ডাই–এর উদ্বোধনী প্রদর্শনীও বাতিল করা হয়েছে। বাদ যায়নি খেলার আয়োজনও। বাতিল করা হয়েছে টোকিও ম্যারাথন।
বিটিএসের নতুন অ্যালবাম
করোনাভাইরাসে সংক্রমণের ঝুঁকিতে আছে পুরো পৃথিবী। তবে এত কিছুর পরেও বিটিএসের নতুন অ্যালবাম ঠিকই আলোচনার ঊর্ধ্বে আছে। অ্যালবাম প্রকাশ পাওয়ার আগেই রেকর্ড পরিমাণে অগ্রিম বিক্রি হয় অ্যালবামটি। এ বছর ‘কোরিয়ান মিউজিক অ্যাওয়ার্ড’–এর পক্ষে তাদের বিশেষ স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় কারণে সেটিও বাতিল হয়ে গেছে। তবে তাতে দুঃখ নেই ব্যান্ডটির। ভক্তরা ভালো থাকলেই খুশি বিটিএস। ‘বর্তমানে বাইরে উন্মুক্ত জায়গায় যাওয়া যেহেতু বেশ ঝুঁকিপূর্ণ, আমরা আশা করব, আপনি আপনার খেয়াল রাখবেন।’ ভক্তদের উদ্দেশে বলেন দলটির শিল্পীরা।

নেতা মাশরাফিকে পেয়ে খুশি নির্বাচকেরা


দুপুরে হঠাৎ দর্শকদের উল্লাস! মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের ইনডোরে অনুশীলন শেষে সীমানা দড়ির পাশ দিয়ে হেঁটে ফিরছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়ককে দেখে দর্শকদের সে কী উচ্ছ্বাস!
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে মাশরাফিকে পেয়ে খুশি নির্বাচকেরাও। আজ ১৫ সদস্যের যে ওয়ানডে দল দিয়েছে বিসিবি, সেটিতে বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়কের ফেরা নিয়ে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন বলেছেন, ‘মাশরাফিকে ফিরে পাওয়াটা দারুণ ব্যাপার। তার অভিজ্ঞতা ও নেতৃত্ব আমাদের ওয়ানডে দলের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।’
বিশ্বকাপের পর শ্রীলঙ্কা সফরে যাওয়ার কথা ছিল মাশরাফির। কিন্তু আচমকা চোটে ছিটকে পড়েন অধিনায়ক। মাশরাফিবিহীন দল শ্রীলঙ্কায় ভালো করেনি। লাসিথ মালিঙ্গার বিদায়ী সিরিজে বাংলাদেশকে ধবলধোলাই করেছিল লঙ্কানরা। এরপর বাংলাদেশ টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি নিয়েই ব্যস্ত থাকায় আর জাতীয় দলে দেখা যায়নি তাঁকে। অবশেষে সিলেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলে দেখা যাবে তাঁকে। ওদিকে নির্বাচক ও বোর্ড সভাপতি যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, তাতে অধিনায়ক হিসেবে ওয়ানডে দলে মাশরাফিকে এবারই শেষবারের মতো দেখার সম্ভাবনা আছে।
বিশ্বকাপের পর লম্বা বিরতিতে দলে ফিরলেন মাশরাফি। বিপিএলের পর কোনো খেলায় ছিলেন না। কদিন আগে ফিটনেস নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। দুদিন হলো বোলিংও শুরু করেছেন। আজ যেমন ওটিস গিবসনের তত্ত্বাবধানে ইনডোরের নেটে ৬ ওভার বোলিং করলেন বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়ক। মাশরাফির সঙ্গে লম্বা বিরতিতে ফিরেছেন পেস বোলিং অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিনও। মিনহাজুল বলছেন, ‘দলের ভারসাম্য আনতে সাইফউদ্দিনের থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
ওয়ানডে দলে নতুন করে সুযোগ পেয়েছেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে ৭১ রান করা নাজমুল হোসেন। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ওয়ানডে দলে জায়গা পেয়েছেন আফিফ হোসেন ও মোহাম্মদ নাঈম। তিন তরুণ ব্যাটসম্যানের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে প্রধান নির্বাচকের ব্যাখ্যা, ‘ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শান্তর (নাজমুল) বর্তমান ফর্মই দলে সুযোগ করে দিয়েছে। সংক্ষিপ্ত সংস্করণে নাঈম আর আফিফকে আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা আছে।’
টেস্ট খেলতে খেলতে ওয়ানডে দলে জায়গা পেয়ে নাজমুল ভীষণ খুশি। দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে আসা বাঁহাতি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান বললেন, ‘আমি মাত্রই শুনলাম খবরটা। অবশ্যই ভালো লাগছে। যদি সুযোগ পাই ভালো খেলার চেষ্টা করব।’

ফেসবুকের কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক

facebook real news jachai

উৎপত্তি চীনে হলেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। চীনে ভাইরাসটি মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ছে এবং চীনের বাইরেও একজনের মৃত্যুসংবাদ আমরা পেয়েছি। স্বাভাবিকভাবেই মানুষের মনে রয়েছে তীব্র শঙ্কা। সেটা বিশ্বের সব প্রান্তেই। আর এই সুযোগ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে দুর্বৃত্তরা। করোনাভাইরাস মোকাবিলা করতেই একদিকে হিমশিম খাওয়ার জোগাড়, তার সঙ্গে জুটেছে ভুল তথ্যের প্রসার।
আর শুধু করোনাভাইরাস কেন, মাঝেই মাঝেই কিছু বিষয় নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে বুঝতে পারেন না মূল ঘটনা কোনটা, আর কোনটা গুজব। এ নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিব্রত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক। কারণ, ফেসবুকেই সব সময় বেশি গুজব ছড়াতে আমরা দেখেছি। আর তাই এ নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি। পাশাপাশি নিউজফিডে ভুয়া সংবাদ চিহ্নিত করার গোটা কয়েক টিপসও দিয়েছে।
শুরুতেই শিরোনাম যাচাই করুন
শিরোনাম নিয়ে সন্দেহপ্রবণ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে ফেসবুক। ভুয়া সংবাদের শিরোনাম সচরাচর রগরগে হয়। ইংরেজিতে হলে বড় হাতের অক্ষর এবং বিস্ময় চিহ্নের ব্যবহার বেশি দেখা যায়। তা ছাড়া শিরোনামে অবিশ্বাস্য কোনো দাবি করা হলো—কিন্তু সেটা বিশ্বাস করার মতো নয়।
ওয়েব ঠিকানায় গোলমাল নেই তো?
ফেসবুকে শেয়ার করা কোনো খবর নিয়ে সন্দেহ হলে ওয়েব ঠিকানা (লিংক) ভালো করে দেখুন। জনপ্রিয় কোনো ওয়েবসাইটের ঠিকানার মতো দেখতে মেকি কোনো লিংক পেলে ধরে নেবেন, সেটা ভুয়া সংবাদ। কৃত্রিম ওয়েবসাইটগুলো নিজেদের অকৃত্রিম হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করে। প্রথম আলোর ওয়েব ঠিকানা সামান্য পরিবর্তন করেও এমন চেষ্টা আমরা আগে দেখেছি।
প্রতিবেদনের তথ্যসূত্র দেখুন
সংবাদের তথ্যসূত্র যাচাই করুন। প্রতিবেদনটি বিশ্বাসযোগ্য সূত্রের কি না, নিশ্চিত হোন। সংবাদমাধ্যমটির সুনাম নিয়েও মনে প্রশ্ন রাখুন। তথ্যসূত্র অচেনা হলে তাদের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন, ‘অ্যাবাউট’ পাতা দেখুন। ভুয়া সংবাদে উপযুক্ত প্রমাণের ঘাটতি কিংবা এমন বিশেষজ্ঞের উক্তি দেওয়া হয়, যা বিশ্বাসযোগ্য নয়। সর্বোপরি, সন্দেহ হলে এড়িয়ে যাওয়া ভালো।
ভুলে ভরা ওয়েবসাইটেই ভুল তথ্য
জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে আলাদা বিভাগে অনেক মানুষ কাজ করেন। আর ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরির পেছনে থাকে অল্পসংখ্যক দুর্বৃত্ত। তাদের লেখাগুলোর বানান ভুলে ভরা থাকে। ঘটনার তারিখ নিয়ে গোলমাল পাকিয়ে ফেলে। ওয়েবসাইটের নকশাও হয় অদ্ভুত। লক্ষণগুলো পেলে সতর্ক থাকুন।
ছবিও পরীক্ষা করুন
ভুয়া সংবাদের সঙ্গে ভুয়া ছবি বা ভিডিও জুড়ে দেওয়ার প্রবণতা আছে। অনেক সময় ছবি আসল হলেও অন্য কোনো ঘটনার ছবি বর্তমান ইস্যুর বলে চালানোর চেষ্টা করা হয়। সন্দেহ হলে গুগলের ইমেজ সার্চে গিয়ে ছবিটি আপলোড করে তার উৎস খুঁজে দেখুন।
একাধিক সংবাদমাধ্যমে দেখুন
ঘটনা গুরুত্বপূর্ণ হলে সাধারণত একাধিক সংবাদমাধ্যম তা নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে। টিভিতে ব্রেকিং নিউজ দেখানো হয়। কোনো সংবাদ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে নির্ভরযোগ্য অন্যান্য সংবাদমাধ্যম ঘেঁটে দেখুন ওই বিষয়ে সংবাদ পেশ করা হয়েছে কি না।
মজা করে লেখা নয় তো?
অনেক সময় গুরুতর ঘটনা নিয়ে কৌতুক করা হয় বা ব্যঙ্গাত্মক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। ফেসবুকে এমন অনেক পেজ আছে। স্যাটায়ার ঘরানার অনেক ওয়েবসাইটও আছে। লেখা পড়ে বোঝার চেষ্টা করুন, তা মজা করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে কি না। কিংবা দেখুন ওয়েবসাইট বা পেজটির অন্যান্য লেখা স্যাটায়ারধর্মী কি না।
আগেই বলেছি, অসৎ উদ্দেশ্যে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। সেই তথ্য পুনরায় শেয়ার করা মানে দুর্বৃত্তদের সাহায্য করা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিন। কোনো তথ্য সম্পর্কে নিজে নিশ্চিত না হয়ে তা শেয়ার করবেন না।

একসঙ্গে জন্মানো তিন বোন কিংবা তিন ভাই


যমজ। আগ্রহ জাগানিয়া শব্দটির আভিধানিক অর্থ হলো একই গর্ভজাত এবং একই সময়ে ভূমিষ্ঠ। তিন সন্তান হলে তাকে বলা হয় ‘ট্রিপলেট বেবি’। চারজন হলে ‘কোয়াড্রুলেট বেবি’। এর বেশি সন্তানও হতে পারে। 
ট্রিপলেট বেবি মানে একসঙ্গে জন্ম নেওয়া তিন সন্তান নিয়ে এই লেখা। অক্সফোর্ডের ইংরেজি-বাংলা অভিধানে (কলকাতা থেকে প্রকাশিত) ট্রিপলেট কথার মানে দেখতে পাচ্ছি ‘একই সঙ্গে জাত একই মায়ের তিনটি সন্তান’। ট্রিপলেটের বাংলা কী হবে? জানতে চাই জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান স্যারের কাছে। মনস্ক পাঠকেরা জানেন, প্রথম আলোতে স্যারের ‘আমার অভিধান’ মূল্যবান একটি রচনা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। আনিসুজ্জামান বললেন, ট্রিপলেটের বাংলা হবে ত্রেতা বা ত্রৈত।

নাতনি চাই না, মেয়েকে বাঁচানআমার বড় মেয়েও সিজারিয়ান। দুই বছর পর এই তিন কন্যা একসঙ্গে জন্ম নিল। একসঙ্গে তিন তিনটা শিশু আমার পেটে, একথা শুনে আমার মা তো মহা আতঙ্কিত হয়ে পড়লেন। তিনি চিকিৎসককে বললেন, ‘আমার মেয়েকে সুস্থ করে দেন আপনি। যেভাবেই হোক, মেয়েকে বাঁচাতে হবে আগে।’ ওরা জন্মানোর পর আমার দুই বোন বলল তাদের একটা একটা করে দিয়ে দিতে। একজন নিঃসন্তান। আরেকজন কানাডায় থিতু। তিন ছেলে তার। সবাই বড়সড়। বিয়ে থা করে সংসারী হয়েছে। সেই বোনের মেয়ের খুব শখ। খুব ঝোলাঝুলি করেছিল কোনো একজনকে নিয়ে নেওয়ার জন্য। হাসতে হাসতে কথাগুলো বললেন ট্রিপলেট বেবির মা মুনিয়া হাসান। পূর্ব গোড়ানে তাঁদের নিজস্ব বাড়ি। নাম অস্থায়ী নিবাস। কয়েক দিন আগে কথা হলো সেই তিন সন্তান মৌমিতা হাসান, মেহনাজ হাসান ও মেহরীন হাসানের সঙ্গে। বয়স তাদের ১৪ বছর। সবাই পড়ছে ক্লাস টেনে। দুইজন এক স্কুলে। অপরজনার স্কুল আলাদা। দুইজন বিজ্ঞান বিভাগে, একজন মানবিকে।
সুদক্ষ শল্যচিকিৎসায় মুনিয়া ও মেহেদী হাসান দম্পতির মুখে হাসি ফুটিয়েছিল। দূর করেছিল সব উৎকণ্ঠা। সেটা ১৪ বছর আগের কথা। শাহজাহানপুরের প্যান প্যাসিফিক হাসপাতালে এই তিন বোনের জন্ম হয় ২০০৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। 
মুনিয়া হাসান বললেন তাঁর ট্রিপলেট বেবি জন্ম দেওয়ার গল্প—গর্ভাবস্থায়ই ডাক্তার আমাকে জানিয়েছিলেন, প্ল্যাসেন্টা যেহেতু একটা, সুতরাং মেয়ে হলে তিনজনই মেয়ে হবে। আর যদি ছেলে হয়, তবে তিনজনই হবে ছেলে। ডাক্তারের কথাই ঠিক হলো শেষ পর্যন্ত। গর্ভাবস্থায় এক মাস আমাকে স্যালাইন নিতে হলো। একপর্যায়ে কোনো খাবারই ভালো লাগত না। আমাকে বলা হলো দুধ খেতে। দুধে সব ধরনের ভিটামিন আছে তো। সাড়ে আট মাসের সময় আমার গাইনোকলজিস্ট কনসাল্ট করলেন শিশুবিশেষজ্ঞ ডা. জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে। সাব্যস্ত হলো, এখন অস্ত্রোপচার করে ওদের বের করা হলে একজনকে ইনকিউবেটরে রাখতে হবে। সেটা এড়ানোর জন্য মোট সাতটি ইনজেকশন নিতে হয় আমাকে। জন্মানোর পর সবচেয়ে ছোটজনকে নল দিয়ে খাওয়াতে হতো কিছুদিন। বুকের দুধ ওদের দিতে পারিনি। সেটা সম্ভব ছিল না তখন।
আরও তথ্য জানতে চাই মুনিয়া হাসানের কাছে। চার মাসের সময় বলা হলো বাচ্চা হবে যমজ। ছয় মাসের সময় যখন শুনলেন ওরা তিনজন, তখন খুবই ভয় পেলেন। মুনিয়া বললেন, আমার বড় মেয়েও সিজারিয়ান। একই ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে তারও নির্ঝঞ্ঝাট জন্ম। 
তিন কন্যার নাম রাখা হলো সিঁথি, রীতি ও প্রীতি। তিন বোনে ঝগড়াঝাঁটি মাঝে মাঝে হয়। দু’জনের চেহারা ও খাদ্যরুচি প্রায় একই রকম। অন্যজন একটু আলাদা। তিন মেয়ের জন্য আগে একই ধরনের পোশাক কিনতেন। এখন কিনতে হয় আলাদা আলাদা। ওর বলে, তিনজনের ড্রেস আলাদা হলে লোকেরা আমাদের চেহারার মিল সহজে বুঝতে পারবে না। রাস্তাঘাটে ওদের চেহারার মিল দেখে লোকজনের অতিমাত্রায় কৌতূহলে ওরা অস্বস্তি বোধ করে। লোকজন হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। আমরা চট্টগ্রামে যে বাড়িতে থাকতাম, সেই বাড়িওয়ালার ছিল যমজ বাচ্চা। ওই বাড়িতে থাকতে থাকতেই আমার তিন–তিনটা বাচ্চা হলো একসঙ্গে।
তিন কন্যার বাবা মেহেদী হাসান পেশায় একজন কেমিস্ট। একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরি করছেন। তিনি বললেন, মেয়েরা আমার বড় লক্ষ্মী। আমি মেয়েদের ঘর সংসারের কোনো কাজ করতে দিই না। ওদের মা অবশ্য কাজ শেখাতে চায়। জোরাজুরিও করে কোনো কোনো সময়। ওদের জন্মের আগে শুধু একটা ব্যাপারেই বেশি উদ্বিগ্ন ছিলাম। কেউ না আবার অসুস্থ হয়ে জন্মায়। তেমন কিছু ঘটেনি। 
বেণি দোলানো তিন বোনের সঙ্গে কথা হলো। আদুরে আদুরে মিষ্টি দেখতে তিনজনাই। লাজুক স্বভাবের। ওরা আমাকে বলে, রাস্তায় লোকে যমজ যমজ বলে সব সময় মন্তব্য করে। ঠায় তাকিয়ে থাকে। এসব আমাদের মোটেও ভালো লাগে না। সে জন্য আমরা পারতপক্ষে বাড়ির বাইরে বিশেষ একটা বের হই না। বড়জন সিঁথি বড় হয়ে ডাক্তার হতে ইচ্ছুক। দ্বিতীয়জন রীতির স্বপ্ন ইঞ্জিনিয়ার হবে। একেবারে ছোটজন শিক্ষকতাকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে চায়। তিন বোনেরই চোখে চশমা। ওদের বাবা জানালেন, চোখের সমস্যা ওদের জন্মগত। ডাক্তার বলেছেন, ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতি ছয় মাস অন্তর ওদের দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা করাতে হবে। তা–ই আমরা করছি। তিন বোনেরই খুব পছন্দের খাবার হলো বিরিয়ানি ।
সাগরপারের তিন ভাই আসিফ নূর চৌধুরী ও নীলিমা জাহিদ সুলতান দম্পতি। এঁদের নিবাস কক্সবাজার। বিয়ের পর বাচ্চা হচ্ছিল না। এ নিয়ে দুশ্চিন্তা আর উদ্বেগ ছিল বেশ। একসঙ্গে তিন সন্তান মাতৃগর্ভে এল। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ভূমিষ্ঠ হতে হলো তাদের। মাতৃজরায়ুতে অবস্থানের সময় ৭ মাস ২ দিন। মাত্র ৪ মিনিটে ডেলিভারি করানো হলো তাদের। সিজারিয়ান সেকশন। তিন জনের সম্মিলিত ওজন চার কেজি। মাটির পৃথিবীতে এসে ভালো রকম বিপদেই পড়তে হয়েছিল তাদের। ইনকিউবেটরে থাকতে হয়েছে টানা ২০ দিন। 
তিন ভাইয়ের নাম যথাক্রমে আকিক নূর চৌধুরী, আমল নূর চৌধুরী ও আলাপ নূর চৌধুরী। তারা এখন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে পড়ে। সবার জন্ম ২০১০ সালের ১০ জানুয়ারি। ওদের বাবা আসিফ নূর একটি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় ও বিপণন ব্যবস্থাপক। মা চাকরি করতেন ব্র্যাকে। তিন ছেলেকে লালন-পালনের জন্য চাকরি ছাড়তে হয়েছে।
আসিফ নূর তিন পুত্র অর্থাৎ ট্রিপলেট বেবি সম্পর্কে অনেক তথ্যই জানালেন। তাঁদের আর কোনো সন্তান নেই। ওদের জন্মের চার মাস আগে জানা গেল তিনজনের কথা। তিন ছেলের জন্ম হয়েছে চট্টগ্রামের রয়্যাল হসপিটালে। মা এ সংবাদ শুনে খুবই খুশি হয়েছিলেন। তখন তার পক্ষে বোঝা সম্ভব ছিল না যে কত বড় দায়দায়িত্ব কাঁধে বর্তাচ্ছে। আসিফ নূর বললেন, ‘আমি তখন ছিলাম ঢাকায়। ফোনে খবরটা জেনে বেশ উৎফুল্ল হই। নিজেকে সৌভাগ্যবান বলে মনে হয়। আমিও দায়িত্বের ব্যাপকতা ও চ্যালেঞ্জটা গোড়ার দিকে অতটা আঁচ করতে পারিনি। একসঙ্গে তিন বাচ্চা বড় করা চাট্টিখানি কথা নয়। তাতে মায়ের কষ্টটাই সবচাইতে বেশি। ওরা মায়ের বুকের দুধ পান করে বড় হয়েছে। পালাক্রমে ওরা মায়ের দুধ পান করত। জন্মের ক্রমানুসারে ওদের মধ্যেকার বড় ছোট নির্ধারণ করেছি। তিনজন দেখতে হুবহু এক নয় বলে সুবিধা হয়েছে।’ 
এই তিন ভাইকে লালন–পালনে কোনো সমস্যা হয় কি? আসিফ নূর বলেন, একটু গাদাগাদি হয় বৈকি! যথাযথভাবে মানুষ করার ব্যাপারটি বেশ ব্যয়বহুলও বটে। ওদের কোনো বড় ভাই কিংবা বোন থাকলে বেশ হতো। এরা তিনজন তো সমানে সমান। একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী। কে কাকে মানবে? দিনমান ঝগড়াঝাঁটি লেগেই থাকে। এই ঝগড়া অবশ্য তাদের নিত্যদিনের খেলার অংশই হয়ে গেছে। 
তিন ভাইয়ের মধ্যে আবার মিলমিশও কম না। একজন আরেকজনকে না দেখে থাকতে পারে না। একসঙ্গে থাকে সব সময়। দল বেঁধে স্কুলে যায়। খেলাধুলা করে। খাদ্যরুচিও এক নয় তাদের। তিন ভাই–ই যেটা পছন্দ করে, তা হলো মুরগি ও বড় চিংড়ি মাছ। অন্য খাবারের বেলায় একেক জনের পছন্দ একেক রকম। দুইজন নিজের হাতে খেতে পারে। একেবারে ছোটজন এখনো মায়ের হাতে খায়। জামাকাপড় সব সময়ই যে এক রকম দিতে হয়, সেটা না। তিনজনের পছন্দের রংও আলাদা। তারা তিনজনই শিল্পী। ছবি আঁকতে ভালোবাসে। সবকিছুকেই তারা রং দিয়ে বিচার করতে ভালোবাসে। যেমন একজন বলল, ‘বাবা তোমার মোটরসাইকেল কি গুন্ডারা নিয়ে গেছে?’ রসিকপ্রবর পিতৃদেব জানতে চাইলেন, ‘গুন্ডার রং কী হবে বলো তো?’ চটপট উত্তর দেয় তারা, গুন্ডার রং হবে চকলেট। চিত্রশিল্পী উত্তম সেনকে একবার তারা প্রশ্ন করেছিল, আচ্ছা কাকু, বলেন তো দুঃখের রং কী? উত্তম সেন উত্তর দিয়েছিলেন, দুঃখের রং হলো ছাই।
নীলিমা জাহিদ সুলতান বললেন, ‘লোকজন বলে, আপা আমরা একটাকেই পালতে পারি না। আর আপনার তো তিন তিনটা! তিনজন নিয়ে আমার কষ্টও বেশি। এরা ঝগড়াঝাঁটি করে, সামলানো মুশকিল। আবার মিলেমিশেও থাকে। পরস্পরের জন্য টান আছে খুব। যৌথ পরিবার আমাদের। তিন বাচ্চার জন্মের পর ব্র্যাকের চাকরিটা আমাকে ছাড়তে হয়েছে।’
মা–বাবা কার প্রতি টান বেশি ওদের? আসিফ নূর এ প্রশ্নের উত্তরে বলেন, বাবা-মা দু’জনের জন্যেই টান আছে ওদের। তিন ভাই টিভিতে খেলা দেখতে পছন্দ করে। প্রিয় খেলা ক্রিকেট, ফুটবল আর রেসলিং। ট্যাবে তারা গেমস খেলেও সময় কাটায়। তিনজনের মধ্যে বেশ ভালো দোস্তি রয়েছে। পড়াশোনায় তিনজনই মোটামুটি ভালো।