SSC 2021 Chemistry 6th Week Assignment Answer

 এস এস সি রসায়ন ষষ্ঠ সপ্তাহের এসাইনহেন্ট ২০২১ সমাধান

বিভিন্ন যৌগ পর্যালোচনা করে পরমাণুসমূহের যোজনী, পরিবর্তনশীল যোজনী ও সুপ্ত যোজনী

ক) পরমাণুর যোজনী

অণু গঠনকালে কোনো মৌলের একটি পরমাণুর সাথে অপর একটি মৌলের কোনো পরমাণু যুক্ত হবার সামর্থ্যকেই যোজনী বলে। আবার অন্যভাবে বলা যায়, কোন মৌলের একটি পরমানু যতগুলো হাইড্রোজেন(H) অথবা তার সমতুল্য (যেমনঃ- ক্লোরিন(Cl), সোডিয়াম(Na) ইত্যাদি) অন্য মৌলের যত সংখ্যক পরমাণুর সাথে সংযুক্ত হতে পারে তাকে যোজনী বলে।

হাইড্রোজেনের যোজনী সবসময় ধরা হয়। অন্যদিকে ক্লোরিনের একটি পরমাণু হাইড্রোজেনের একটি পরমাণুর সাথে মিলে HCl গঠন করে বলে ক্লোরিনের যোজনীও , কেননা এটি কেবল একটি হাইড্রোজেনের সাথে যুক্ত হয়েছে।

আবার একটি সোডিয়াম(Na) পরমাণু একটি এবং কেবল একটি ক্লোরিন(Cl) পরমাণুর সাথে মিলে NaCl ( সোডিয়াম ক্লোরাইড বা খাদ্য লবণ) গঠন করে বলে সোডিয়ামের যোজনীও ১।

মিথেন (CH4) কার্বনের (C) যোজনী চার। কেননা কার্বন (C) চারটি হাইড্রোজেন(H) পরমাণুর সাথে যুক্ত হয়েছে।

তেমনিভাবে পানি(H2O) তে অক্সিজেনের যোজনী দুই। কারণ এখানে অক্সিজেন দুটো হাইড্রোজেনের সাথে যুক্ত।

আবার, SO3 ( সালফার ডাই অক্সাইড) যৌগে সালফারের যোজনী 6, কেননা এখানে একটি সালফার তিনটি অক্সিজেনের সাথে যুক্ত। আমরা জানি, অক্সিজেনের যোজনী এবং তিনটি অক্সিজেন মোট (×)= টি হাইড্রোজেনের সাথে যুক্ত হতে পারে। অর্থাৎ, আপাতদৃষ্টিতে একটি সালফার টি হাইড্রোজের সাথে যুক্ত হতে পারবে বিধায় এর যোজনী ৬।

সবার প্রথমে এসাইনমেন্ট সমাধান পেতে ভিজিট করুন NewResultBD.Com

 

H₂O= এখানে হাইড্রোজেন এর যোজনী 1, অক্সিজেনের যোজনী 2

CO2= এখানে কার্বন এর যোজনী 4, অক্সিজেনের যোজনী 2

CCl4= এখানে কার্বন এর যোজনী 4, ক্লোরিন এর যোজনী 1

PCl5= এখানে ফসফরাস এর যোজনী 5, ক্লোরিন এর যোজনী 1

PCl3= এখানে ফসফরাস এর যোজনী 3, ক্লোরিন এর যোজনী 1

PI5= এখানে ফসফরাস এর যোজনী 5, আয়োডিন এর যোজনী 1

SO2= এখানে সালফার এর যোজনী 4, অক্সিজেনের 2

SO3= এখানে সালফার এর যোজনী 6, অক্সিজেনের যোজনী 2

 

) পরিবর্তনশীল যোজনী সুপ্ত যোজনী

. কোন মৌল যখন ভিন্ন ভিন্ন যৌগে ভিন্ন ভিন্ন যোজনী প্রদর্শন করে তখন তার যোজনীকে পরিবর্তনশীল যোজনী বলে।

যেমন

SO2= এখানে সালফার এর যোজনী 4, অক্সিজেনের 2

SO3= এখানে সালফার এর যোজনী 6, অক্সিজেনের যোজনী 2

এখানে সালফার এর যোজনী পরিবর্তনশীল যোজনী।

অপরদিকে, পরিবর্তনশীল যোজনী বিশিষ্ট মৌলের সর্বোচ্চ যোজনী হতে সক্রিয় যোজনী বিয়োগ করলে যে যোজনী পাওয়া যায় তাকে সুপ্ত যোজনী বলে।

SO2 এখানে সালফারের সুপ্ত যোজনী = (6-4)= 2

. পরিবর্তনশীল যোজনী কখনো শূন্য হতে পারে না। কিন্তু, সুপ্ত যোজনী শূন্য হতে পারে।

 

) তেজস্ক্রিয় আইসোটোপের ব্যবহার

আইসোটোপ হলো একই মৌলিক পদার্থের ভিন্ন ভিন্ন পরমাণু যাদের পারমাণবিক সংখ্যা একই তবে নিউক্লিয়াসে নিউট্রনের সংখ্যা ভিন্ন।

বর্তমান বিজ্ঞান জগতে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ এক বিস্ময়কর ভূমিকা গ্রহণ করেছে। বিজ্ঞানের অধিকাংশ ক্ষেত্রে এদের ব্যবহার হয়ে থাকে।

 

কৃষিবিদ্যায় ব্যবহার

কৃষিবিদ্যায় আইসোটোপের ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্য দ্রব্য উৎপাদনের খরচের মধ্যে জমির সার একটি প্রধান খরচ। ফসফেট জাতীয় সারের সাথে রেডিও ফসফরাস আইসোটোপ মিশ্রিত থাকে বলা যেতে পারে গাছের মধ্যে এই সার গাছের বৃদ্ধির কোন স্তরে কি কি কাজ করছে। বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন যে, মাটির উপর ফসফেট দেবার সাথে সাথেই গাছপালা শিকড় দিয়ে সেগুলিকে টেনে নেয়। রেডিও আইসোটোপের সাহায্যে আরো জানা গেছে যে, তামাক, ভুট্টা, তুলা, বিট প্রভৃতি গাছ কেবল চারা অবস্থাতেই ফসফেট গ্রহণ করতে সক্ষম। চারা অবস্থাতেই এই সার দেওয়া না হলে তেমন কোনো কাজে আসে না। পর্যবেক্ষক আইসোটোপ ব্যবহার করে জানা গেছে যে, জমিতে জল সেচনের পূর্বে ওই জলে ফসফরিক এসিড মিশ্রিত করে দিলেই জমিতে ফসফেট দেওয়ার আর কোনো প্রয়োজন হয় না।তেজস্ক্রিয় সাহায্যে নতুন নতুন জাতের বীজ সৃষ্টি করাও বর্তমানে সম্ভব হয়েছে। অধিকন্তু আলু পেঁয়াজ রসুন প্রভৃতি বিভিন্ন কৃষিজাত ফসল দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট মাত্রার তেজস্ক্রিয় বিকিরণ প্রয়োগ করা হয়। এর ফলে পোকামাকড় বা জীবাণু আক্রমণে ফসল সহজে নষ্ট হয় না; আলু পেঁয়াজের চারা গজানো এবং বিভিন্ন রকম ফলের পাকা বা পচে যাওয়া বিলম্বিত হয়।

তেজস্ক্রিয় বিকিরণের সাহায্যে বিভিন্ন দেশে ফসলের ক্ষতিকর নানা রকম কীটপতঙ্গ ধ্বংস করার পদ্ধতিও বেশ সাফল্যজনক প্রমাণিত হয়েছে। এই পদ্ধতিতে বিকিরণের সাহায্যে বিপুল সংখ্যক পুরুষ পতঙ্গের প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট করে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয় যেখানে ফসলে ওই পতঙ্গের আক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন দেশে ধ্বংস করার পদ্ধতি বিপুল সংখ্যক ফলে স্ত্রী পতঙ্গরা প্রজনন ক্ষমতাহীন পুরুষ পতঙ্গের সাথে মিলিত হলে তাদের বংশ বিস্তার ঘটে না। বলাবাহুল্য এতে কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না বলে পরিবেশ দূষিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। অথচ কীটপতঙ্গ নির্বংশ হওয়ায় ফসল রক্ষা পায়।

রেডিও আইসোটোপ ব্যবহার করে সবুজ লতা-পাতার ফটোসিন্থেসিস বা সালোকসংশ্লেষণ সম্পর্কে অনেক তথ্য জানা সম্ভব হয়েছে।

শিল্পজগতে ব্যবহার

তেজস্ক্রিয় আইসোটোপের সাহায্যে ধাতু দিয়ে তৈরি দেয়াল বা প্লেটের বেধ অতি সহজেই মাপা যেতে পারে। মোটর গাড়ির টায়ার, ঘরবাড়ি রং করার রং, গাঁথুনির কংক্রিট প্রভৃতি কতখানি মজবুত বা টেকসই তা নির্ধারণের সমস্ত কার্যে পর্যবেক্ষক আইসোটোপ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কারখানায় কার্যরত শ্রমিকদের দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য রেডিও আইসোটোপ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তেজস্ক্রিয় উপাদান দিয়ে তৈরি এক প্রকার গ্লাভস বা কব্জিবন্ধ হাতে লাগিয়ে মিস্ত্রিরা কার্যরত হয় এবং মেশিনে তেজস্ক্রিয় রশ্মি ধরা পড়ার যন্ত্র যুক্ত করা থাকে। মিস্ত্রির হাত মেশিনের খুব কাছে গেলেই তার হাতের কব্জি বন্ধ হতে নির্গত তেজস্ক্রিয় রশ্মি যন্ত্রে ধরা পরে এবং সাথে সাথেই তাকে সতর্ক করে দেওয়ার জন্য তীব্র আলোর ঝলকানি সৃষ্টি হয় অথবা মেশিনটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া একটি মেশিনের মধ্যে কোনখানে কি পরিমাণ ঘর্ষণ হচ্ছে এবং পিচ্ছিলকারক পদার্থসমূহ কি পরিমাণ কাজ করতে পারছে এই সমস্ত গবেষণার ক্ষেত্রেও রেডিও আইসোটোপ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

চিকিৎসাবিজ্ঞানে ব্যবহার

চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোগ নির্ণয় নিরাময়ে তথা গবেষণা উন্নয়নে তেজস্ক্রিয় বিকিরণের বহুল প্রয়োগ বর্তমানে বিশ্বজুড়ে চালু হয়েছে। এই চিকিৎসা পদ্ধতির হাতিয়ার হচ্ছে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ। রোগভেদে এবং রোগাক্রান্ত অঙ্গ ভেদে ভিন্ন ভিন্ন তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। সচরাচর গামা রশ্মি নিঃসরণকারী স্বল্প অর্ধায়ুর তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ ব্যবহৃত হয়। আজকাল অনেক ক্ষেত্রে পজিট্রন বিচ্ছুরণকারী আইসোটোপ যথা: তামা-64, কার্বন-11 এবং অক্সিজেন-15 রোগ নির্ণয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে। তেজস্ক্রিয় আইসোটোপের ব্যবহারে ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে। গড়ে প্রতিদিন 1000 থেকে 10,000 টি পরীক্ষার মধ্যে একটি ক্ষেত্রে ক্ষতিকর প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে।

পরমাণু চিকিৎসায় ব্যবহৃত আইসোটোপগুলির মধ্যে সবচেয়ে যেসব বেশি ব্যবহৃত হয় সেগুলি হচ্ছে আয়োডিন-131, আয়োডিন-125, টেকনিশিয়ান-99, স্ট্রনশিয়াম-90 ইত্যাদি।

পরমাণু চিকিৎসায় রোগ নির্ণয়ে ব্যবহৃত যন্ত্রগুলি নিম্নরূপ:

থাইরয়েড আপটেক যন্ত্র: রোগীকে তেজস্ক্রিয়-131 সেবন করানোর পর নির্ধারিত সময়ান্তে থাইরয়েড গ্রন্থিতে আয়োডিন গ্রহণের শতকরা হার যন্ত্র দ্বারা পরিমাপ করা হয়ে থাকে।

লিনিয়ার স্ক্যানার: যন্ত্রের দ্বারা থাইরয়েড গ্রন্থির প্রতিটি অংশে সেবন কৃত আয়োডিন গ্রহণের শতকরা হার পরিমাপনের মাধ্যমে গলগ্রন্থির প্রতিচিত্র গ্রহণের পর তাতে কি ধরনের রোগ হয়েছে তা নির্ণয় করা যায়। তাছাড়া এই যন্ত্র ব্যবহার করে তেজস্ক্রিয় টেকনিশিয়ান-99 এর সাথে বিভিন্ন বিভিন্ন কীট মিশিয়ে যকৃত, কিডনি, হাড়, মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড ইত্যাদি প্রত্যঙ্গের প্রতিচিত্র গ্রহণ করে ফোঁড়া, টিউমার, ক্যান্সার অন্যান্য জটিল রোগের উপস্থিতি নির্ণয় করা যায়।

টেরিজিয়াম অ্যাপ্লিকেটর: চোখের টেরিজিয়াম অপারেশনের পর পুনরাবৃত্তি রোধ করার জন্য পরপর দুদিন স্ট্রনশিয়াম-90 থেকে নিঃসৃত বিটা রশ্মি দ্বারা চিকিৎসা করা হয়ে থাকে।

গামা ক্যামেরা: যন্ত্রের সাহায্যে লিনিয়ার স্ক্যানারের চেয়ে দ্রুত তেজস্ক্রিয় পরমাণু চিত্র তথা আপটেকের ধরনধারণ জানা যায়। গামা ক্যামেরায় কম্পিউটার যুক্ত করা হলে চিত্রটি বিভিন্ন ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় এবং নিরীক্ষিত এলাকা থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়। পরমাণু-চিকিৎসা পদ্ধতিতে যন্ত্রের গুরুত্ব অপরিসীম সর্বাধিক।

রেনোগ্রাম: কিডনির কার্যকারিতা পরীক্ষণে রোহ নির্ণয়ে রেনোগ্রাম ব্যবহার করা হয়। এর জন্য অল্পমাত্রায় তেজস্ক্রিয় আয়োডিন-131 একটি রাসায়নিক পদার্থের সংমিশ্রণ ইনজেকশনের মাধ্যমে রোগীর শরীরে প্রবেশ করানো হয় এবং চিত্রের মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা হয়। কিডনি সংযোজনের ক্ষেত্রে এই পরীক্ষাটি গুরুত্বপূর্ণ।

উন্নত ধরনের গামা গণনা যন্ত্র: এটি এক ধরনের স্বয়ংক্রিয় গণক যন্ত্র বা কাউন্টার। পরিমাপের সকল কাজ করেনি এই সূক্ষ্ম যন্ত্রটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কোন তেজস্ক্রিয় নমুনা সক্রিয়তা এটি অনেক বেশি দক্ষ।

পজিট্রন ক্যামেরা: এই পদ্ধতিতে স্ফটিক ব্যবহার করে বিপরীতমুখী দুটি গামা রশ্মি ফটো ধারণ করা হয়। এর ফলে বিভিন্ন তল থেকে গৃহীত প্রতিচ্ছায়ার সমষ্টি একটি তীক্ষ্ণ বিচিত্র সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু পজিট্রন বিকিরণকারী আইসোটোপগুলির অর্ধায়ু খুব কম হওয়ায় তরব যন্ত্র ব্যবহার করে কৃত্রিম উপায়ে এগুলি উৎপাদন করতে হয়। ফলে পজিট্রন মাধ্যমে চিত্রায়ন খুবই ব্যয়বহুল।

রসায়নে ব্যবহার

রসায়নে এদের ব্যবহার প্রভূত কল্যাণ সাধন করেছে। এদের সাহায্যে বহু সাংশ্লেষিক উপাদান প্রস্তুত করা সম্ভব হয়েছে। রাসায়নিক বিক্রিয়ার হার, পদার্থের অণুর গঠন, দ্রবণীয়তা, অনুঘটন প্রভৃতি বিষয়ে গবেষণা তেজস্ক্রিয় আইসোটোপের সাহায্যে সহজলভ্য হয়েছে।