ফুলশয্যা! বাসর রাতের গল্প ৩
বন্ধুদের খোচা খেতে খেতে বাসর ঘরে বীর পুরুষের মত প্রবেশ করেই ফেললাম। প্রবেশ করার পূর্বে হার্টবিট কিছুটা কম থাকলেও প্রবেশ করার পর ইহা চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে লাগল। লাজুক ছেলেটি একটা অপরিচিত মেয়ের সাথে থাকবে, মেয়েটার কি তাকে পছন্দ হবে? মেয়েটি কি তাকে স্বাভাবিক ভাবে নিবে! ভাবতে ভাবতে কপাল থেকে ঘাম ঝড়তে শুরু করল।
এত ভয় পাওয়ার কি আছে, তার সাথে তো সারাজীবন থাকতে হবে, ভয় পাওয়ার কিছু হয়নি কাব্য, নিজেকে নিজে সাহস যুগাতে শুরু করলাম। এই সন্ধিক্ষনে অসহায় ছেলেটিকে সাহায্য করার মতও কেউ নাই। মেয়েটির মনেও কি তাই চলছে? চলবেই বা না কেন, সেও তো একটা অপরিচিত ছেলের সাথে থাকবে, তারও নিশ্চই হার্টবিট বাড়ছে।
নিজেকে শক্ত করলাম। একটু এগিয়ে গেলাম তার কাছে। সে চুপটি করে বসে আছে। তার ঘোমটা খানা তুলিয়া তাহার মুখখানা দেখিবার জন্য নিজেকে শক্তভাবে প্রস্তুত করলাম। কিন্তু বেচারা হাত কিছুতেই তাহার ঘোমটা ধরিবার সাহস পাইতেছে না।
মেয়েটি বুঝতে পারিল, আমি ভীষন ভাবে লজ্জ্বিত, তাই নিজেই ঘোমটা তুলিল। তার চন্দ্রমুখ টা দেখে আমি অবাক দৃষ্টিতে থমকে গেলাম। হরিনী চোখ আর মেঘ বর্ন চুল আমাকে ভাষাহীন করে দিয়েছে।
এই যে মিস্টার,কি দেখছেন এত করে হুম?
ইয়ে মানে, না কিছু না।
থতমত হয়ে তার কাছ থেকে কিছুটা দুরে গিয়ে টেবিলে রাখা পানিটা পান করলাম। বুঝতে পারছি মেয়েটি মুচকি মুচকি হাসতেছে। এবার একটু সাহস পেলাম। মেয়ের নিশ্চই আমাকে কিছুটা পছন্দ হয়েছে। তার কাছে আবার গেলাম।
— আচ্ছা তোমার নাম তো অর্নি।
— মানে কি!! বিয়ে করছেন, অথচ নাম জানেন না।
— না মানে ইয়ে।
— এত মানে মানে করবেন না তো।
বুঝতে পারলাম বালিকার সাহস আমার থেকে অনেকটা বেশি।
–আচ্ছা অর্নি একটা কথা বলি?
–হুম।
— আমরা কি ফ্রেন্ড হতে পারি?
আমার প্রস্তাব শোনে সে মুচকি হাসিতে লাগিল, নববধু না হলে মনে হচ্ছে অট্টহাসিই দিতো।
ফুলশয্যা রাতে বৌকে বন্ধুর প্রস্তাব দেয়াতেই মনে হয় এমন হাসি।
মাথা নেড়ে মুচকি হাসিতে উত্তর দিল, হুম হতে পারি।
একটা অপরিচিত মেয়ের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করাটা আমার মনে বাধা দিল। তাই তাকে বন্ধুত্ব করার প্রস্তাবটা দিয়েছিলাম। একে অপরকে ভাল করে বুঝা, দুজনকে দুজন জানা। একটা সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তুলা যা আমার প্রতিদিনেরর স্বপ্ন ছিল।
স্বামী স্ত্রী সবচেয়ে ভাল বন্ধু হতে পারে। যখন দুজন মনের খুব কাছাকাছি থাকতে পারব, তখন শরীর এমনিতে কাছে আসবে।
— ছাদে যাবেন এখন? কি সুন্দর পুর্নিমা!
— হুম।
— আচ্ছা আজকে সারা রাতটা চলেন গল্প করে কাটাই।
অর্নি আমার এমন আবদার শোনে খুব খুশি হলো।দুজন ছাদে গেলাম। চাঁদের আলোতে অর্নিকে স্বর্গের অপ্সরী লাগছিল।
— আচ্ছা অর্নি পৃথিবীতে সবচেয়ে সুন্দর সম্পর্ক কোনগুলা? ভালবাসা কোনগুলা।
অর্নি চাঁদটার দিকে তাকিয়ে উত্তরটা দিলো,
— প্রথম যখন আপনাদের বাসায় পা দিলাম, তখন আপনার মা আমাকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরছিলেন, আমার মনে হলো আমি আমার মাকে পেয়ে গেছি, সেটা হচ্ছে সুন্দর সম্পর্ক, আমাকে আপনার মায়ের নিজের মেয়ে মনে করা, আর আমি আপনার মাকে আমার শ্বাশুরী নয়, নিজের মা মনে করা। আপনার বাবা যখন বলেছিলেন, আমার কোন মেয়ে নেই, এখন একটা লক্ষ্মী মেয়ে আমি পেয়ে গেছি, সেটা হচ্ছে ভালবাসা।
অর্নির কথা শুনে আমি চুপ হয়ে গেলাম। নিজেকে সবচেয়ে সৌভাগ্যবান ছেলে মনে হচ্ছে। যে আমার কথা না বলে আমার পরিবার, আমার মা বাবাকে নিয়া প্রথমেই ভাবে, সেই মেয়ের মত আমাকে কেউ ভালবাসতে পারবেনা।
একটু অভিমানের নাটক করে বললাম,
— আমি কিছুই না বুঝি?? হুহ!!!
–এই যে আপনি এই রাতে একটা মেয়েকে পেয়েও তার শরীরকে না ভালবেসে তার কাছে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, একটা সুন্দর রাত উপহার দিচ্ছেন, আমার জীবনের সেরা রাতটি উপহার দিচ্ছেন।
সেটা হচ্ছে একটা মেয়েকে সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ। যা প্রতিটা মেয়েই তার স্বামীর কাছ থেকে আশা করে।
অর্নির মুখে স্বামী শব্দটি শোনে লজ্জ্বায় লাল হয়ে গেলাম।
অর্নি আমার হাতটি ধরে ফেলল,
— এই যে লাজুক ছেলে, এত ভয় পাচ্ছেন কেন?
আমার আরেকটা জিনিষ চাই, সেটা পারবেন তো দিতে?
— হুম পারব।
— একটা রাজকন্যা গিফট করতে পারবে?
আমি সেদিন লজ্জ্বাকন্ঠে বলেছিলাম,
— শুধু ভালবাসতে হবে, আমি তোমায় পৃথিবীর সব সুখ দিয়ে দিব,,,,,,,,,,,।