ভালবাসার গল্প: হাদারাম

 


 এই যে?
-জি বলুন।
-আপনি রাতে ঘুমান না?
-মানে কি?
-মানে হচ্ছে, এই যে প্রতিদিন ক্যাম্পাসে টলতে টলতে আসেন ;নিশ্চয় রাতে ঘুমানো হয়না মনে হয়?
-তা শুনে আপনার কি,আমি কি আপনাকে চিনি নাকি যে আপনাকে বলব!
-চেনার দরকার নেই, তবুও বলুন।
-আপু আপনি কে বলুনতো?সেই তখন থেকে প্যাচাল পেরে যাচ্ছেন।
-বাব্বা আপনি আবার রাগও করতে পারেন।সবসময় তো দেখি চশমা চোখে, মাথা নিচু করেই হাটেন।এই ভালো কথা আপনার সেই মোটা ফ্রেমের চশমা খানা কোথায়?আজ পড়েননি যে?
-ইচ্ছে হয়নি তাই পড়িনি।আপনার কোন সমস্যা? পাগল নাকি? এই বলে আমি হনহনিয়ে ক্লাসের দিকে পা বাড়ালাম।
একটু গিয়ে পেছন ফিরে দেখি মেয়েটি হেসে হেসে গড়িয়ে পড়ছে আর আমাকে পেছন ঘুরতে দেখেই চিৎকার করে বলল মিস্টার আহান কালকে যেন চোখে চশমা দেখি?
এতক্ষনে আমি মেয়েটির দিকে ভালভাবে লক্ষ্য করলাম।সাদা চুড়িদারে শ্যামবর্নের মেয়েটিকে কোন পরির সাথে তুলনা করলেও ভুল হবে না।কি মায়াবী একটা মুখ। আমি আর অতকিছু না ভেবে ক্লাসে চলে গেলাম।
সমস্যা কিছুই ছিল না।কিন্তু সমস্যা বাধল রাতে আমি যখন পড়ার টেবিলে বসলাম তখন। কিছুতেই যেন পড়ায় মন দিতে পাড়ছিনা।চোখের সামনে শুধু সেই শ্যামবালিকার ছবি ভাসতে লাগল। আর তার সেই কথা কানে বাজতে লাগল,”মিস্টার আহান কালকে যেন চোখে চশমা দেখি!সে রাতে আর ঘুমই হোলোনা।
রাতে এত প্রতিজ্ঞা করলাম যে আমি কালকে চশমা পড়ব না।নিজেই নিজেকে বলতে লাগলাম কোথাকার কোন মেয়ে বলেছে তার জন্যে তার কথা আমাক শোনার লাগবে নাকি? কিন্তু পরের দিন ঠিকি আমাকে চশমা চোখে দেখা গেল।
-ক্লাসের পর লাইব্রেরির পেছনে বসে ফোন চাপছিলাম।হটাৎ পেছন থেকে কেউ একজন মাথায় টোকা দিল।মেজাজ পুরা ৪২০ ডিগ্রি এঙ্গেল এ খারাপ হয়ে গেল।পেছন ফিরে যেই বকা দিতে যাব অমনি দেখি কালকের সেই মেয়ে হাসি হাসি মুখ করে আমার দিকে চেয়ে আছে।ভাবছিলাম বকা দিব কিন্তু এই মেয়ের নিষ্পাপ হাসি দেখে আমার মুখ দিয়ে আর কথাই বের হচ্ছেনা, তার ওপর এই মেয়ে আবার আমার প্রিয় রং হলুদ কালারের চুড়িদার পড়ছে।আচ্ছা এই মেয়ের কি চুড়িদারের দোকান আছে নাকি?
-এই যে মশাই কি দেখেন অমন করে হু, বলে আমার চোখ থেকে চশমাটা খুলে নিল।আমার কথামত চশমা পড়ছ তাহলে?
-আমি কারো ইচ্ছায় চশমা পড়ি নাই।আমার ইচ্ছা হইছে তাই পড়ছি।আর আপনি আমাকে তুমি করে বলছেন কেন?
-শোনো আজ থেকে আমরা বন্ধু। যদিও আমি তোমার এক ব্যাচ জুনিয়র কিন্তু আমরা তুমি করেই কথা বলব।অত আপনি আপনি করতে পারবোনা।
সেই সময়টা থেকেই ইরির সাথে বন্ধুত্ব, তখন থেকেই একসাথে ক্যাম্পাসের সোনালি সময় গুলো পার করা।তার সাজানো তুমি থেকে কবে যে আমরা তুই এ নেমেছি দুজনের কেঊ টের পাইনি।
এর মাঝে আমি একদিন তাকে জিজ্ঞেস করছিলাম যে সে প্রথমে কেন আমার সাথে এভাবে পরিচিত হয়েছে।তার ঊত্তর ছিল এরকম, গাধাদের অতকিছু জানতে হয়না।আমিও আর কিছু জানতে চাইনি।এভাবেই তিনটি বছর কেটে গেল।

–ইরি আমাকে মাঝেমাঝেই রান্না করে খাওয়ায়।আজকেও ক্যাাম্পাসে শিমুল তলায় বসে তার হাতের খিচুড়ি তৃপ্তি সহকারে খাচ্ছি।
বুঝছোস ইরি, তোর হাতের খিচুড়ির সাথে আসলে কোন কিছুর তুলনা হয়না। দেখি মেয়েটা আমার দিকে ভেজা ভেজা চোখে তাকিয়ে আছে।আমি আর তাকে কিছু না বলে খাওয়ার দিকে নজর দিলাম।সেই সবে থেকেই দেখে আসতেছি আমার খাওয়ার সময় মেয়েটা অপলক আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।
-আহান শোন, বাবা না আমার বিয়ে ঠিক করেছে?
-কথাটা শুনে বুকটা যেন ছ্যাত করে উঠল।তবুও কষ্টটা লুকিয়ে বললাম ভালোতোরে।বয়স তো আর কম হোলোনা।দিন দিন তো বুড়ি হয়ে যাচ্ছিস। এবার বিয়েটা করেই ফেল।
-তুই খুশি হয়েছিস?
-খুশি হবনা কেন;তোর বিয়ে বলে কথা আর তোর বিয়েতে আমিতো নাঁচব।
-এখন থেকেই নাচ তুই বলে সে উঠে গেল।আমি এত ডাকলাম তবুও সে একবার পেছন ফিরে তাকালো না।তবে আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম মেয়েটা হাত দিয়ে তার চোখের জল মুছল।
-আমি জানি ইরি আমাকে ভালোবাসে, আর আমি এটাও জানি ইরিও আমার প্রতিটা সত্তার সাথে মিশে গেছে।
কিন্তু কোন এক অজানা কারনে দুজন দুজনকে কিছুতেই মনের কথাগুলো বলতে পারিনা।
-রাতে ঘুমুতে গেলাম কিন্তু কিছুতেই দু চোখের পাতা এক করতে পারছিলামনা। শুধু ইরির সেই ছলছল চোখ মনে পরতে লাগল;যেই চোখের ভাষা আমাকে ছুতে চায়,যেই চোখ আমার কাছ থেকে কিছু শুনতে চায়।মনের মাঝে কি এক তোলপাড় শুরু হল।না,এই মেয়েকে ছাড়া আমার কিছুতেই চলবে না।তাকে আমি অন্যের হতে দিতে পারিনা।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ৯.৩৫ বাজে।১০ টা পর্যন্ত ইরিদের হল খোলা থাকবে।আমি আর কিছু না ভেবে ইরিদের হলের দিকে দৌড় দিলাম।সেখানে গিয়ে তাকে ফোন দিলাম।কিন্তু এই মেয়ে ফোন ধরে না কেনো?দ্বিতীয় বারে সে ফোন ধরে বলল…..
-হুহ,বল
-হু কি,ফোন ধরিসনা কেন?
-কি দরকার সেটা বল(গম্ভীর ভাবে)
-একটু তোর হলের নিচে আয় তো, আমি নিচে দাঁড়িয়ে আছি।
-মানে কি আহান?এই সময় কেন?আমি পারব না।
-আয় না প্লিজ!
– পারব না।

-ওপাশে ফোন কাটার শব্দ পেলাম।কিন্তু আমি জানি সে আসবে,তাকে আসতেই হবে।একটু পরেই আমার ধারনা প্রমাণিত করে তাকে মাথা নিচু করে আসতে দেখা গেল।এসেই বলল….
-কি,বল?
-কই এর আগে তো কখনও কিছু জানতে চাসনি।যখন যা করতে বলেছি তাই করেছিস।তবে অাজ কেন?
-সবসময় সবকিছু এক থাকেনা আহান।কি বলবি বল,দাড়োয়ান চাচা গেট বন্ধ করে দিবেন।
-ইরি শোন,তুই না এই বিয়েটা করিসনা।
-কেন করবোনা?
-কারন আমি তোর হাতের খিচুড়ি না খেয়ে থাকতে পারবোনা,তোকে ছাড়া থাকতে পারবোনা,তোকে অন্যের হতে দেখতে পারবোনা রে।
দেখি ইরি কেঁদে ফেলছে।এই ইরি কাঁদছিস কেন?
-সে কোন কথা না বলে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল হাদারাম,এই কথাটা বলতে তুই এতটাদিন সময় নিলি।তুই আসলেই একটা হাদারাম!কোথথাও বিয়ে করবোনা আমি।আমার সকল সুখতো তোকে ঘিরেই।
-এতক্ষনে বুজলাম আমার চোখ বেয়েও অশ্রুর ধারা নামা শুরু করছে।নামুক এই অশ্রু, মুছে নিয়ে যাক আমাদের দুজনের এতদিনের সকল অসারতা।