একজন পুরুষ যদি একজন নারীর সাথে জোর করে যৌন-মিলন করে তাকে ধর্ষণ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু যদি একজন নারী একজন পুরুষকে জোর করে তার সাথে যৌন মিলন করতে বাধ্য করে – তাহলে সেটাও কি ধর্ষণের পর্যায়ে পড়বে?
ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসের আইনে একে ধর্ষণ বলা হয় না। কিন্তু এ নিয়ে এক নতুন সমীক্ষা চালানোর পর একজন গবেষক বলছেন, হয়তো এখানে পরিবর্তন আনার সময় হয়েছে।
“আমরা এ নিয়ে কথা বলতে ভয় পাই। আর যদিও বা কথা বলি, আমাদের কেউ বিশ্বাস করে না” – বলেছেন জরিপে ‘জোরপূর্বক যৌনমিলনের শিকার’ এক পুরুষ।
পুরুষদের কি ‘ধর্ষণ’ করা যায়? তাকে কি জোর করে উত্তেজিত করা সম্ভব – যাতে যৌন মিলন ঘটতে পারে?
গবেষকরা এখন বলছেন: এটা অসম্ভব নয়, বরং অসম্ভব মনে করাটাই একটা ‘মিথ’ বা ‘কাল্পনিক উপকথা’।
ব্রিটেনের ল্যাংকাস্টার ইউনিভার্সিটি ল’ স্কুলের ড. সিওভান উইয়ার ২০১৬-১৭ সালে যুক্তরাজ্যে ‘একজন পুরুষকে জোরপূর্বক যৌনমিলনে বাধ্য করার’ ওপর প্রথম গবেষণা পরিচালনা করেন।
ড. উইয়ার বলছেন, পুরুষকে জোর করে যৌন মিলনে বাধ্য করাকে ইংরেজিতে বলে ‘ফোর্সড-টু-পেনিট্রেট’ বা এফটিপি – এবং পুরুষের মনের ওপর এর প্রতিক্রিয়া হতে পারে খুবই মারাত্মক।
কেস স্টাডি: জন নামে একজনের কথা (আসল নাম নয়)
“আমি প্রথম যখন খেয়াল করলাম যে আমার সঙ্গিনী নিজেকে নিজে নির্যাতন করছে – তখনই আমি বুঝলাম যে কিছু একটা গোলমাল হয়েছে। তার এ জন্য কিছু চিকিৎসাও করা হয়।”
“ছয় মাস পরে যেটা ঘটলো, সে নিজেকে নিজে নির্যাতন করার পরিবর্তে এ জন্য আমাকে বেছে নিল।”
“হয়তো আমি বসার ঘরে বসে আছি, সে হঠাৎ রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে আমার নাকে খুব জোরে একটা ঘুষি মারলো, তারপর খিলখিল করে হাসতে হাসতে দৌড়ে পালিয়ে গেল।”
“আরেক দিন হয়তো সে কাজ থেকে ফিরে এসেই দাবি করলো, তার সাথে যৌনমিলন করতে হবে। এ জন্য সে হিংস্র হয়ে উঠতো। ব্যাপারটা এমন স্তরে চলে গেল যে তার কাজ থেকে বাড়ি ফেরার সময় হলে আমি ভয়ে থাকতাম।”
আরেকদিন জন রাতে ঘুম থেকে জেগে উঠে আবিষ্কার করলেন তার সঙ্গিনী তার হাতে হাতকড়া লাগিয়ে তাকে খাটের ফ্রেমের সাথে বেঁধে রেখেছেন। তার পর একটা লাউডস্পিকার দিয়ে জনের মাথায় আঘাত করতে শুরু করলেন তিনি।
জনের অন্য হাতটাও তিনি দড়ি দিয়ে খাটের সাথে বেঁধে ফেললেন, এবং তার পর তার সাথে জোর করে যৌনমিলন করার চেষ্টা করতে লাগলেন
আতংক এবং যন্ত্রণার কারণে জন তার সঙ্গিনীর ইচ্ছে পূরণ করতে পারলেন না।
তখন সঙ্গিনী তাকে আবার মারধর করতে লাগলেন, এবং বাঁধা অবস্থায় আধঘন্টা ফেলে রাখলেন। তার পর তাকে মুক্ত করে দিলেও তার সাথে এ ব্যাপারে কোন কথাই বলতে চাইতেন না তিনি।
এর মধ্যে জনের সঙ্গিনী গর্ভবতী হলেন, কয়েক মাসের জন্য তার হিংস্র আচরণ কমে গেল। কিন্তু তার সন্তান জন্মের কিছু কাল পরই জন এক রাতে আবিষ্কার করলেন – তাকে আবার বিছানার সাথে হাতকড়া দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে।
জনকে এবার জোর করে ভায়াগ্রা খাইয়ে দিয়ে তার মুখ বেঁধে রাখলেন সঙ্গিনী। সেদিন বাথরুমে গিয়ে অনেকক্ষণ একা বসে ছিলেন জন।
জন বলছেন, পরে এসব ঘটনা নিয়ে তিনি অন্যদের সাথে কথা বলতে গেলে কেউ বিশ্বাসই করে নি।
“অনেকে প্রশ্ন করেছে যে কেন আমি তাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি না, বা কেন তাকে পাল্টা মার দিচ্ছি না। এর অনেক কারণ আছে, যেমন আমাদের সন্তান, অথর্নৈতিক বিষয় – এরকম অনেক কিছু।”
পুরুষের ‘ধর্ষিত হবার’ গল্প অনেকে বিশ্বাস করতে চায় না
ড. উইয়ার বলছেন, তিনি দেখেছেন – পুরুষের ‘ধর্ষিত হবার’ গল্প অনেকে বিশ্বাস করতে চায় না।
ড. উইয়ার বলছেন, ফোর্সড-টু-পেনিট্রেট বা এফটিপি সম্পর্কে কিছু ধারণা তার গবেষণায় ভুল প্রমাণিত হয়েছে।
এরকম একটি ধারণা হচ্ছে: এটা অসম্ভব, কারণ পুরুষরা শারীরিকভাবে মেয়েদের চেয়ে বেশি শক্তিশালী।
আরেকটি ভুল ধারণা: পুরুষরা যৌন মিলনের যে কোন ‘সুযোগ’কেই ইতিবাচকভাবে নিয়ে থাকে।
তৃতীয় আরেকটি ভুল ধারণা: পুরুষের যৌনাঙ্গ উত্থিত বা ‘ইরেকশন’ হয়েছে মানেই হলো যে সে যৌন মিলন চাইছে। আসলে তা নয়। পুরুষরা ভয় পেলে বা ক্রুদ্ধ হলেও ইরেকশন ঘটতে পারে এবং তা কিছু সময় স্থায়ীও হতে পারে।
ড. উইয়ার বলছেন, “গবেষণায় আরো দেখা গেছে যে ধর্ষণের সময় নারীদের পক্ষেও যৌন সাড়া দেয়া সম্ভব, কারণ তাদের দেহ এ ক্ষেত্রে শারীরবৃত্তীয়ভাবে সাড়া দিতে পারে। ধর্ষণের শিকার হওয়া পুরুষ ও নারী – উভয়ের ক্ষেত্রেই এর স্পষ্ট প্রমাণ আছে কিন্তু এ ব্যাপারটা নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা হয় না।
ড. উইয়ার আরো বলছেন, তিনি এমন কিছু এফটিপির শিকার পুরুষের অভিজ্ঞতা শুনেছেন – যারা অতিমাত্রায় মদ্যপান বা অন্য কোন নেশা করার পর নারীর হাতে জোরপূর্বক যৌনমিলনের শিকার হয়েছেন – কিন্তু তা ঠেকাতে পারেন নি।
একটি ঘটনায় একজন নারী একটি সমকামী পুরুষকে যৌন মিলনে বাধ্য করেন – এবং তাকে হুমকি দেন – এতে রাজি না হলে পুরুষটি যে সমকামী তা সবার কাছে ফাঁস করে দেবেন তিনি।
জরিপে অংশ নেয়া একজন বলেছেন, “আমাকে পুলিশ বলেছে ‘তুমি নিশ্চয়ই ব্যাপারটা উপভোগ করেছো – না হলে তুমি নিশ্চয়ই আগেই আমাদের জানাতে।”
আরেকজন বলেছেন, “যেহেতু আমরা পুরুষ তাই আমরা এটা নিয়ে কথা বলতে ভয় এবং লজ্জা বোধ করি।”
“বললেও কেউ বিশ্বাস করে না। তারা বলে, তুমি তো পুরুষ, একজন পুরুষকে কিভাবে যৌন নিপীড়ন করা যেতে পারে?”
অনলাইনে এ জরিপের মাধ্যমে ২০০ জন পুরুষের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন ড. উইয়ার। এতে ড. উইয়ার দেখতে চেয়েছেন, কী প্রেক্ষাপটে একজন পুরুষকে যৌনমিলন করতে বাধ্য করা হয়, এর পরিণাম কী হয়, এবং আইনের দৃষ্টিতেই বা এ ব্যাপারটিকে কীভাবে দেখা হয়?