-আজ সাতদিন হয়ে গেলো,তোমার কোনো খবর নেই,ফোন করলে ধরছো না!মেসেজ সিন করে রিপ্লাই দিচ্ছ না,কি ব্যাপার জয়া?
-প্লিজ আকাশ,আমি আর আমাদের সম্পর্কটাকে বয়ে নিয়ে যেতে পারছি না!কেন বুঝতে পারছো না তুমি!সম্পর্কে যখন উষ্ণতা হারিয়ে যায়,তখন তাকে অহেতুক বয়ে বেড়াবার কোনো মানে হয় না!আই,আই জাস্ট ওয়ান্ট টু ব্রেক আপ উইথ ইউ...
-ওহ!তাহলে অফিস ফ্লোরে যেসব কথা শুনতে পাচ্ছি,সেটাই সত্যি!
-তুমি ফ্লোরে কি শুনেছো আমি জানি না,জানতেও চাই না,শুধু প্লিজ আমায় ছেড়ে দাও।আই ক্যান্ট হ্যান্ডেল দিস রিলেশন এনি মোর....
-হাউ কুড ইউ?
-ও কাম অন আক্কী,ভাবটা তো এমন দেখাচ্ছ,যেন ভাজা মাছটাও উল্টে খেতে জানো না,তোমার যা সেক্স অ্যাপীল,তোমার যা ইম্প্রেশন,একটা এক্স-ফ্যাক্টর তো তোমার মধ্যে আছেই বস!এন্ড মোস্ট ইম্পরট্যান্ট,(ফিসফিসিয়ে,আকাশের কানের কাছে এসে)ইউ আর জাস্ট অসাম ইন বেড ডার্লিং!দেখো,ক্লিয়ারলি বলে দেওয়াই ভালো,হ্যাঁ ফ্লোরে তুমি কানাঘুষোতে যা শুনছো,সেটাই ঠিক!গত মাসে বসের সঙ্গে যখন বিজনেস ট্রিপে ইউরোপ গিয়েছিলাম,হি প্রোপোসড মি!আর কোনো বোকাই এই সুযোগ হাতছাড়া করবে!রাইট?!ডোন্ট ওয়ারি ডার্লিং,বসের পি এ থেকে আমি যখন এই গোটা অফিসের এম ডি হবো,তখন তুমি থাকবে আমার প্রায়োরিটি লিস্টে সবার ওপরে!আফটার অল তুমি তো আমায় কম আনন্দ দাওনি,তাই তোমাকে...
সপাটে একটা চড় এসে পড়লো জয়ার গালে..
-ব্লাডি প্রস্টিটিউট!গো টু হেল....
ক্যাফেটেরিয়ায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিলো ওরা দুজন।জয়া বোধহয় ভাবতেও পারেনি,দু-টাকার একটা সাধারণ এমপ্লয়ী তাকে এমনভাবে সাঁটিয়ে থাপ্পড় মারতে পারে!রাগের চোটে দু-চোখ দিয়ে আগুন ঠিকরে পড়লো ওর....
রাগে-ঘৃণায় মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে আকাশ গটমট করে বেরিয়ে গেলো ওর সামনে দিয়ে....
-ওকে!কাট ইট!এক্সিলেন্ট শট স্যার!
-প্যাক আপ?
-ইয়েস স্যার,প্যাক আপ!
-হেই বেবি!ইউ ডিড আন ওয়ান্ডারফুল জব!
-এস.আর. আই উইল কিল ইউ!এত্ত জোরে মেরেছ,কান গরম হয়ে গেছে আমার!গাল জ্বালা করছে!
-সরি ডার্লিং,আমি পুরোপুরি আকাশের ক্যারেক্টারে ঢুকে গিয়েছিলাম!বাই দা ওয়ে,হোয়াটস ইওর প্ল্যান ফর টুনাইট?
-প্ল্যান বলতে ইভনিং এ জিম,রাতে একটা ক্যালেন্ডারের ফটোশুট আছে,প্যাক আপ হবার পর দেন.....
-দেন?
-দেন....উমমমম,ফ্রি!
-গুড!
-গুড!হোয়াই?
-রাতে চলো আমার সঙ্গে,আমার একটা বন্ধুর ছেলের জন্মদিন,ফ্যামিলি ফাংশন!আমায় এটেন্ড করতেই হবে!
-হোয়াট!হোয়াট!হোয়াট!উ!সুপারস্টার এস.আর,তার কো-আর্টিস্ট-এর সঙ্গে ফ্লোরের বাইরে ঘুরে বেড়াবে?কাল তো পেজ থ্রির ফ্রন্ট পেজে চলে আসবে...
-আই কেয়ার আ ড্যাম!ইউ জাস্ট টেল মি,ইউ আর কামিং ওর নট!ইউ নো,আই ডোন্ট ফোর্স এনিওয়ান!
-চিল বেবি!অফ কোর্স আই এম কামিং....
-ওকে দেন,সি ইউ এট নাইন শার্প!
-ওকে....
-বাই হানি.....
সুপারস্টার এস.আরের সুদৃশ্য অডিটা চোখের সামনে দিয়ে সাঁ করে বেরিয়ে গেলো।
-কি করছিস গুবলু?
-হোয়াট?!
-আজ আবার নতুন একজন?
-ইসন্ট সি সো বিউটিফুল?!
-জীবনের চৌত্রিশটা বসন্ত তো পেরিয়ে এলি,এবার এসব ছাড়!লাইফে সেটেল হ!রোজ-রোজ এভাবে এক-একজনকে...
-আমি তো কাউকে ফোর্স করছি না,রিকুয়েস্টও করি না,এক্সপ্লয়েট করি না,কেউ যদি আগে আমার সঙ্গে ফ্লার্ট করতে শুরু করে,তো আমার আর একটু এগোলে প্রবলেম কি বলতো!সে দিলে আমার নিতে প্রবলেম কোথায়?ইন্ডাস্ট্রির কেউ বলতে পারবে না,কারোর অমতে আমি হাতটুকুও কোনোদিন ধরেছি বলে....
-বাট গুবলু,দিস ইস নট লাইফ আফটার অল!
-প্লিজ মলি!মায়ের মতো জ্ঞান দিস না তো!ওদিকে মা ফোন করে বলতে থাকে,এদিকে তুই!সেই ছোট্ট থেকে তোকে দেখে আসছি।গ্রো আপ লেডি,এবার তো আমার গার্জেন না হয়ে আমার বন্ধু হ....
-আমি আর আন্টি,আমরা দুজনেই তো তোর ভালো চাই বল...
-ওক্কে মেরি মা,এবার থাম!আই রিয়েলি ডোন্ট নো,তোর বর কি করে তোকে সহ্য করে মলি!এত্ত জ্ঞান দিস....
-হে হ্যান্ডসাম!
-কামিং ডার্লিং!মলি,বাই-বাই-বাই!আজ রাতের প্রচুর প্ল্যান!কাল ইভনিং এ ফোন করবো!
-বাই মল্লিকা!ফুড ওয়াজ অসাম ডিয়ার!গুড নাইট.
এস.আরের বাংলো বাড়িতে সেই রাতটা দুজনে একে-অপরের মধ্যে ডুবে রইলো।এস.আর বর্তমান সিনে-ইন্ডাস্ট্রির সুপারস্টার!আর মিস লিলি একজন স্ট্রাগলিং মডেল!হ্যাঁ,গত বছর পর্যন্তও ছিল,কিন্তু তারপর এস.আরের ছত্রছায়ায় এসে এই বছরই প্রথম বড়ো ছবিতে কাজ করছে তারই বিপরীতে।কাজটুকু পাইয়ে দেবার জন্যই,লিলি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছে এস.আরকে নিভৃতে সঙ্গ দিয়ে...
চিলড বিয়ারের তলানিটুকু এক সিপে শেষ করে ফেললো এস.আর।গলাটা শুকিয়ে কাঠ...
-স্ক্রিপ্টের ডায়লগ বলতে ইচ্ছে করছে এস.আর!লিলি বললো....
-হোয়াট!
-সিরিয়াসলি!ইউ আর জাস্ট অসাম ইন বেড....
-রিয়েলি!টেল মি সামথিং দ্যাট আই ডোন্ট নো বেবি!
-হা হা!ইউ আর সুপারকুল!
-এন্ড ইউ নো হোয়াট লিলি,ইউ আর সো বিউটিফুল!
মিষ্টি করে হেসে এস.আরের বুকের মধ্যে মুখ গুঁজলো লিলি।
-তোমার নেক্সট প্রজেক্ট কি?আমি তোমার সঙ্গে পরের প্রজেক্টেও স্ক্রিন শেয়ার করতে চাই....
-লেটস সি বেব!প্রোডিউসারের এন্ড থেকে লাস্ট ডিসিশন আসে!
-কাম অন হানি!কে না জানে,ইউ আর ইন্ডাস্ট্রি!তুমি যা বলবে তাই-ই...
ফোনটা বেজে ওঠে এস.আরের!নম্বর দেখেই ফোনটা নিয়ে কাঁচটা সরিয়ে বাইরে বেরিয়ে যায় ও...
-ইয়েস মাম্মি ডিয়ার!
প্যাডেড ব্রা-টা পরতে-পরতে লিলির চোখ চলে যায় নিজের ফোনের দিকে।ফোনটা বাংলোতে ঢোকার সময়ই সাইলেন্ট করে রেখেছিলো ও।এখন দেখলো ফোনটা রিং হয়ে কেটে গেলো।তাড়াতাড়ি ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো,একুশটা মিসড কল হয়ে আছে।সবকটা অভির নম্বর।ছেলেটার কি কিছু হলো!পর্দাটা একটু সরিয়ে লিলি দেখলো,এস.আর. সুইমিং পুলের পাশে মায়ের সঙ্গে কথা বলতে ব্যস্ত।আবার ফোনটা রিং হওয়ায় তাড়াতাড়ি ধরলো ও....
-কি হয়েছে কি!কতবার বলেছি না,শুট চলাকালীন আমায় ফোন করবে না!
-তুই কোথায় সালি!তোর ক্যালেন্ডারের ফটোশুট যেখানে হবার কথা ছিল,আমি সেই ষ্টুডিওর বাইরেই দাঁড়িয়ে আছি!কোথায় তুই!
-শিট!
-তুই নিশ্চয়ই ওই হিরো ব্যাটার বিছানা গরম করছিস?
-নইলে তোর মাল গেলার টাকা কোথা থেকে দেবো বল!শুধু একটা সিনেমায়,ক্যামেরার সামনে দুটি ডায়লগ বলে তো আর সারাজীবন পেট চলবে না!আমার আরও কাজ দরকার!আর তার জন্য যদি....
-তুই আজ বাড়ি আয় হতভাগী!তোর টাকায় আমি...
-বেশি কথা বোলো না,আমি ডিভোর্স দিয়ে দিলে তো রাস্তায় নেমে দাঁড়াতে হবে!নিজের পেট চালাবার মুরোদও তো নেই!নেহাৎ ছেলেটার কথা ভেবেই....
কাঁচটা সরানোর শব্দ পেয়ে তাড়াতাড়ি ফোনটা কেটে দেয় লিলি।ঘরে ঢুকে এস.আর. গেঞ্জিটা গায়ে চড়ায়।
তারপর একটু হেসে লিলির দিকে চেয়ে বলে,
-সরি ডিয়ার!মা ফোন করেছিলো!তাই....
-নো নো,ইটস ওকে!
-আর তোমায়?
মুহূর্তেই রক্তশুন্য হয়ে গেলো মিস লিলির মুখ!
-আই মাস্ট সে,খুব ভালো মেনটেইন করেছো নিজেকে।তোমার পেটে মুখ ডোবানোর সময়ই আমি বুঝতে পেরেছি,তোমার বেবি আছে।মেকআপের তীব্র গন্ধ মাথা ধরিয়ে দিচ্ছিলো।স্ট্রেচ মার্কের দাগ কি এত সহজে ঢাকা যায় লিলি!তবে তুমি মিস না মিসেস জানতাম না!কিন্তু কেন এসব?অবশ্য বলতে না চাইলে,আমি জোর করবো না...
-হি ইস এ মনস্টার এস.আর!ভালোবেসেই বিয়ে করেছিলাম,রোজ রাতে নেশা করে আমায় মারতো!ছেলেটা পেটে থাকতেও।থিয়েটার করার শখ ছিল বিয়ের আগেও।বিয়ের পরও একটু-আধটু মডেলিং করতে শুরু করলাম।প্রথমে ছোট পর্দা,তারপর বড়ো পর্দায় তোমার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ করে দিলে তুমি!আর একটু সেটেলড হয়ে ছেলেটাকে নিয়ে বেরিয়ে আসতে চাই এস.আর!
-ইউ আর আ মাদার লিলি!আর আমি জানি মায়ের লড়াইটা কতটা কঠিন!কিন্তু এভাবে তোমার অসহায়তার সুযোগ নিয়ে,আমি তোমাকে অসম্মানিত করতে পারবো না।বন্ধু হিসেবে তুমি যখনই চাইবে,আমায় পাশে পাবে।আমি ভেবেছিলাম তুমি ইচ্ছাকৃতই আমার সঙ্গে,কিন্তু আর সম্ভব না ডিয়ার,কোনোদিন তোমার বেবি প্রিন্সের সঙ্গে দেখা হলে,তার সামনে দাঁড়াতে পারবো না যে...
-এস.আর.....
-ডোন্ট ওয়ারি!পরের প্রজেক্টে আমার সঙ্গে তুমিই থাকবে।মিস্টার দেশাইয়ের সঙ্গে কথা চলছে।আমি তোমার কথা বলে দেবো!তুমি ট্যালেন্টেড এক্টরেস।আমি জানি,এটাও ব্লকবাস্টার হিট হবে।কিন্তু এরপর কারোর সামনে মাথা নিচু করে নয়,নিজের দক্ষতায় কাজ করবে তুমি।প্রয়োজনে সবসময় আমায় পাশে পাবে।কিন্তু বিনিময়ে কিছু চাই না!প্লিজ....
লাল রঙের প্যাডেড ব্রা-টা পরে,ধবধবে সাদা ডিভানে মাথাটা নিচু করে বসে আছে লিলি।
-ইউ নো হোয়াট এস.আর...
-টেল মি ডার্লিং,হোয়াট আর ইউ থিংকিং?আজকের পর হয়তো এভাবে সেটের বাইরে আর কোনোদিন আমাদের দেখা হবে না,তো আজ বলো তুমি,আমি শুনবো...
-আজ এখানে আসার আগে পর্যন্ত ভেবেছিলাম,তুমি নাম্বার ওয়ান পারভার্ট!কিন্তু এখন বুঝতে পারছি,ইন্ডাস্ট্রির নাম্বার ওয়ান প্লেবয় হওয়া সত্ত্বেও,একটা মেয়েও তোমার বিরুদ্ধে মুখ খোলে না কেন?
-প্লেবয়!!হা হা হা!দ্যাটস ট্রু বাই দা ওয়ে....
-নো,দ্যাটস নট ট্রু!ইউ আর আ ম্যান,প্রপার....
-বেবি,এত ভারী-ভারী কথা বলে নেশাটা চটকে দিও না প্লিজ!লিসেন ডিয়ার!তুমি কার সামনে নিজেকে নগ্ন করবে,নিজের বুকের কাপড় সরাবে,সেটা সম্পূর্ণই তোমার ব্যক্তিগত ব্যাপার!বাট নট ইন ফ্রন্ট অফ মি,নট এনিমোর।এটা পরে নাও....
সারা সন্ধ্যে যে লাল রঙের ব্যাকলেস ড্রেসটা পরে লিলিকে দেখে,এস.আর মুগ্ধ হয়েছিল,ড্রেসটা খুলে নগ্ন শরীরটা পাবার জন্য উৎসুক হয়েছিল,সেই ড্রেসটাই এখন সযত্নে ওর হাতে ফিরিয়ে দিলো....
-আর হ্যাঁ,পিঠটা ভীষণ জ্বালা করছে,তোমার ম্যানিকিওর করা নখগুলো বেশ ভালোভাবেই বসিয়ে দিয়েছো!ড্রয়ারে এন্টিসেপটিক আর কটন আছে,লাগিয়ে দাও একটু.....
-সরি!
এস.আরের চওড়া খোলা পিঠটায় অজস্র নখের দাগ।জ্বালা করারই কথা!জামাটা পরে নিয়ে তুলোয় করে একটু ওষুধ লাগিয়ে পিঠে মাথা রাখলো লিলি...
-এস.আর!
-হুম!
-ক্যান আই হাগ ইউ?
ঘুরে বসে লিলিকে বুকে জড়িয়ে ধরলো এস.আর।ওকে জড়িয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলো লিলি।লিলির মুখটা তুলে কপালে আলতো করে চুমু খেলো এস.আর...
-একটাই জিনিস তোমার প্রাপ্য এস.আর!হিউজ রেস্পেক্ট!ইউ আর আ গুড হিউম্যান বিয়িং...
-চল ঝুটি!
-আমি বেরোই।কাল সেটে দেখা হবে!কাল তো লেট নাইট শুট,পার্টি সিকোয়েন্স।ডিস্কোতে...
-ইয়েস ডিয়ার!কাল সকালে জিম,সুইমিং,ব্রেকফাস্ট,তারপর হেব্বি ঘুম!রাজা কে জিজ্ঞেস করতে হবে,আর কোনো কিছু সিডিউলে আছে কিনা!ওহো,আর একটা শুট আছে কাল স্টুডিওতে,তাও শেষরাতে।জানলা দিয়ে সানরাইজটা নেবার কথা!তোমায় ছেড়ে আসবো লিলি?
-না থ্যাঙ্কু,তোমার ড্রাইভারকে বলে দাও,তা হলেই হবে...
-ওকে!
ব্যাগটা হাতে নিয়ে বেডরুম থেকে বেরোনোর আগে,লিলি আর একবার জাপটে ধরলো এস.আর. কে।
এস.আর. ও আলতো করে লিলির মাথার চুলগুলো একটু এলোমেলো করে দিলো।পুরুষের স্পর্শ একজন নারীর চেয়ে ভালো আর কেউ বোঝে না।একটু আগে এই মানুষটাই বিছানায় ছিঁড়ে-খুঁড়ে ফালাফালা করেছে ওর শরীরটাকে,কিন্তু এখন লিলি খুব ভালো করেই বুঝতে পারলো,এ স্পর্শে কোনো যৌনতা নেই,নেই কোনো অশালীন চাহিদা!আছে শুধু বন্ধুত্বের ভরসাটুকু....
লিলি বেরিয়ে যাবার পর,ফোনের গ্যালারি খুলে নিজের মায়ের ছবিটায় পরম ভালোবাসায় চুমু খেলো এস.আর...
-দিইনি মা,হারতে দিইনি।আজ একজন মাকে জিতিয়ে দিয়েছি!লাভ ইউ...
পরদিন ফ্লোরে প্যাক আপের পর....
লেট নাইট শুট ছিল সেদিন এস.আরের!তারপর আবার স্টুডিওতে।পরপর দুটো শুটের পর প্যাক আপ হতে-হতে সকাল হয়ে গেছে।লিলি অনেক আগেই বেরিয়ে গেছে।মাথাটা যন্ত্রণায় ছিঁড়ে যাচ্ছিলো।স্পট বয় কড়া করে এক মগ কফি দিয়ে গেলো তাড়াতাড়িই।গ্রীনরুমে মেকআপ রিমুভ করতে-করতে মনে হচ্ছিলো ওর দমটাই বন্ধ হয়ে যাবে।কোনোরকমে কিছুটা মেকআপ তুলে টিস্যু পেপার হাতে নিয়েই বাইরের লম্বা ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ালো এস.আর!ভেবেছিলো একটু খোলা হাওয়ায় দাঁড়াবে,কিন্তু দেখলো এদিকেও সব জানলাগুলো বন্ধ।বাইরের আলোটুকু পর্যন্ত আসছে না।নিশ্চয়ই পাশের ফ্লোরে কোনো শুটিং চলছে।কিন্তু এত আর্লি মর্নিং!কৌতূহলবশত একটু এগিয়ে গেলো ও....
-বুকের আঁচলটা আর একটু নামবে,আর একটু ঝুঁকবেন,ক্লিভেজটা ঠিকঠাক দেখা যাচ্ছে না।চিন স্লাইটলি ডাউন!কলার বোনটা আর একটু,চোখের পাতাটা নামাবেন!স্পট লাইট!রেডি!
খচাৎ করে ফটো তোলার শব্দ হলো,কিন্তু বিহাইন্ড দা ক্যামেরা আর মনিটরের সামনে বসা প্রত্যেকের মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে,ছবি মনঃপূত হয়নি।হলোও তাই।আবারও পোজ দিতে হচ্ছে মেয়েটিকে...
-ফাক ম্যান,সি ইস ড্যাম হট!
-শাট আপ এন্ড কনসেনট্রেট ডুড!লেট মি ফোকাস!
-ওয়ান মিনিট!এক্সকিউজ মি লেডি,আই ডোন্ট নো,হোয়াটস ইয়োর নেম বাট...
-ঋদ্ধি,ড্রেসারকে ডাক!ড্রেসার,মেকআপ...
-নো ম্যান,লেট মি হ্যান্ডেল দিস....
-এই শাড়ির আঁচলটা আর একটু নামিয়ে,আর একটু এভাবে পেটের কাছ থেকে সরিয়ে...কিছুটা ইচ্ছাকৃতভাবেই ঋদ্ধির অবাধ্য হাতটা বারবার ছুঁয়ে যাচ্ছে মেয়েটির কোমরের ভাঁজ আর অর্ধঅনাবৃত স্তন!কিন্তু মেয়েটাও বুকের বাঁদিকের শাড়ির আঁচলটা প্রাণপণে আঁকড়ে রয়েছে।লো-কাট ব্লাউজ,একপাশের আঁচল সরিয়ে হালকা ক্লিভেজ দেখানোর কথা!এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী এই শর্তেই রাজি হয়েছে সে।কিন্তু এখন বুক থেকে পুরোপুরি শাড়ি নামিয়ে দেবার চেষ্টা করছেন ইনি।মেয়েটাও কিছুতেই বুকের বাঁ-দিক থেকে শাড়ির আঁচলটাকে নামাতে দেবে না....
-ফাক ম্যান!দাঁতে-দাঁত চেপে মৃদু ধমকে ওঠেন এস.আর!
-স্যার আ-আপনি!
-হোয়াট দা হেল আর ইউ ডুইং ঋদ্ধি?ইউ ক্যান্ট টাচ ইওর অবজেক্ট!ডোন্ট ইউ নো দ্যাট?এন্ড সি ইস আনকম্ফোর্টেবল উইথ ইউ ঋদ্ধি,নিখিল ক্যান্ট ইউ সি দ্যাট?এবার চেঁচিয়ে ওঠেন এস.আর...
-স্যার,সরি স্যার,আমি জাস্ট মেকআপ আর ড্রেসারকেই ডাকছিলাম....
-কাজটাকে আগে সম্মান করতে শেখো ঋদ্ধি,তারপর কাজ করবে!ব্লাডি লুজারস....
-এক্সট্রিমলি সরি স্যার!
মেয়েটার দিকে একবার তাকালো এস.আর।মেয়েটা তখনও মাথা নিচু করেই বসে আছে।হয়তো ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন।যদিও দুদিনের মধ্যেই চালচলন বদলে যাবে।এসব মেয়েদের খুব ভালো করেই জানা আছে ওর।কিন্তু তবু মেয়েটার এমন অপমান ও মেনে নিতে পারলো না কিছুতেই!কফি মগটায় চুমুক দিতে-দিতে নিজের গ্রীনরুমের দিকে চলে গেলো এস.আর....
-সালা,সকালে একটা বিকেলে আর একটা মেয়ে নিয়ে ফূর্তি না করলে যার নাকি দিন গড়ায় না,সে আমায় জ্ঞান মাড়াতে আসছে!সকাল-সকাল নতুন ঝাক্কাস একটা মেয়ের সামনে প্রেস্টিজের মা-বোন এক করে ছেড়ে দিলো মাইরি!
-ছাড় না,তাড়াতাড়ি শটগুলো নে।বিকেলেই স্যারকে এডিট করে পাঠাতে হবে।আর্জেন্ট!ম্যাগাজিনের কভারের কাজ।সময় লাগবে।
-ব্লাডি...
-ঋদ্ধি!শুনতে পেলে না,আর করে খেতে হবে না....
-সালা!কি আছে বলতো বালটার মধ্যে!সব প্রোডিওসাররা একেবারে হুমড়ি খেয়ে পড়ে!
-তোর চেয়ে আমি ইন্ডাস্ট্রিতে বেশি সময় কাটিয়েছি।যতটা খেয়াল করেছি,বেশ কয়েকটা জিনিস আছে। হিরোইনরা ওনার সঙ্গে কাজ করতে খুব কম্ফোর্টেবল!
-সে তো সালা সারারাত ন্যাংটো হয়ে বিছানায় জাপটে শুয়ে এসে,পরদিন স্ক্রিনে যদি সামান্য একটু ইন্টিমেট হতে বলে সবাই পারবে!এ আর কি এমন ব্যাপার!
-বিছানায় উনি তাদের সঙ্গেই যায়,যারা স্বেচ্ছায় যেতে চায়,তুই খেয়াল করিস কিনা জানি না,ইভেন ফটো তোলার সময় সামনে থেকে দেখলে মনে হবে,দুদিকে দুটো মেয়ের কোমর ধরে রয়েছে,কিন্তু পিছনে দুটো হাত কোমর থেকে অন্তত এক ইঞ্চি দূরে রেখে ফটো তোলেন উনি।আমি নিজে দেখেছি।এমনকি কোনোদিনও শুট চলাকালীন ওনাকে অ্যাডভান্টেজ নিতে দেখিনি।
এবার চুপ করে গেলো ঋদ্ধি....
-আর তার থেকেও বড়ো কথা,একটা ভিডিও বা সিনেমার একটা ক্লিপিংকে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে ভাইরাল করে দিয়ে,একটা লিমিটেড ক্রাউডকে সাময়িক পাগল করে,জোয়ারে গা ভাসিয়ে কিছুদিনের জন্য,যে কোনো কাউকে সুপারস্টার বানিয়ে দেওয়া যায়।কিন্তু এক্টর তৈরী করা যায় না।ওই এক্স-ফ্যাক্টরটা ভিতরে থাকতে হয়।কিন্তু একইসাথে এক্টর আর সুপারস্টার,এট দা সেম টাইম,ইস ডেডলি কম্বিনেশন!আর সেটা হলেন স্যার এস.আর!
-হুম!
-তাই ওনাকে কাঠি করে,ইন্ডাস্ট্রিতে করে খেতে পারবি না বস।তার চেয়ে মন দিয়ে কাজটা কর,মেয়েছেলে দেখলেই ওসব মাগীবাজি বাদ দে.....
ডিরেক্টরের সঙ্গে বসে কিছু শটস দেখে রোদ-চশমাটা চোখে দিয়ে সবে ষ্টুডিও থেকে বেরোচ্ছিল এস.আর!খোলা চুলে হালকা হলুদ রঙের চুড়িদারে,কাঁধে একটা ব্যাগ নিয়ে সেই মেয়েটিও বেরোলো।ব্যাগ থেকে একটা ব্যান্ড বের করে চুলটা আটকে নিলো।তারপর রোদ-চশমাটা বের করে চোখে পরতে যাবে,এমন সময় সামনের দিকে চেয়ে স্থির হয়ে গেলো তার দৃষ্টি...
কিন্তু পরমুহূর্তেই চোখটা নামিয়ে,রোদ-চশমাটা পরে বেরিয়ে গেলো সে।
এতদিন যে কেউ,যে কোনোভাবে এস.আরের সঙ্গে কথা বলার জন্য ব্যস্ত হয়ে থাকতো।ও নিজেও সেই ব্যাপারটাতেই অভ্যস্ত।কিন্তু এই ব্যাপারটা কি হলো!এস.আর.ভেবেছিলো,মেয়েটি হয়তো তার সঙ্গে কথা বলবে,সকালের জন্য অন্তত একবার থ্যাঙ্কু বলবে।কিন্তু কথা বলা দূরে থাক,মেয়েটি মাথা নিচু করে সোজা বেরিয়ে গেলো....
বেশ অবাক হয়ে গেলো এস.আর।ও গাড়িতে উঠে পড়লো,স্টুডিওর একেবারে গেটের বাইরে এসে দেখলো,মেয়েটি ক্যাবে উঠে বেরিয়ে যাচ্ছে..
জিম করতে-করতে চোখের সামনে হলুদ রং ভাসছে।কাল সারারাত ঘুম নেই,সকাল থেকে কিছু খাওয়া নেই।টেকনিক্যালি কাল রাত থেকে প্রায় না খাওয়া।বেশি এক্সসারসাইজে ব্ল্যাক-আউট হবার কথা।কিন্তু চারদিকে সর্ষেফুল দেখছে কেন ও!সুইমিং করতে গিয়েও নীল জলের মধ্যে হলুদের আভা ভেসে উঠছে বারেবারে!
-ফাক ম্যান!হোয়াট দা হেল ইস হ্যাপেনিং!
নাঃ,আজ আর হবে না।জল থেকে উঠে পড়লো এস.আর!
-ও হিরো!আজ তাড়াতাড়ি উঠে পড়লি?অল ওকে?ওপরের ব্যালকনি থেকে আওয়াজ দিলো রাজা।এস.আরের ক্লোজ ফ্রেন্ড এন্ড সেক্রেটারি!
-ইয়া বাডি,ইভরিথিং ইস ফাইন!ডোন্ট ওয়ারি!
শাওয়ার নিয়ে প্রোটিন শেকটুকু গলায় ঢেলে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো এস.আর।বিকেলে একটা মিউজিক চ্যানেলে একটা মুভির প্রমোশন আছে,একটু ঘুমিয়ে নিতে হবে এখনই।একরকম জোর করেই চোখদুটো বন্ধ করলো ও।কিন্তু চোখের সামনে আবার ভেসে উঠছে সেই একজোড়া চোখ।কত প্রশ্ন যেন আবদ্ধ রয়েছে ওই চোখের গভীরে।তা ঢাকতেই যেন তড়িঘড়ি রোদ-চশমায় চোখদুটো আড়াল করলো মেয়েটি।কিন্তু কেন এত পর্দা!হলুদ ওড়নাটা অবাধ্য হাওয়ায় বেসামাল হয়ে যাচ্ছে বারেবারে।কি সুন্দর নরম একটা গন্ধ আসছে না!ওড়নাটা থেকেই কি!উগ্র পারফিউমের গন্ধে আজকাল দমবন্ধ হয়ে আসে এস.আরের।এই গন্ধটা বেশ আবিষ্ট করে রাখে।মনে একটা অদ্ভুত প্রশান্তি আসে।ওড়নাটায় মুখ ডুবিয়ে পরম শান্তিতে ওই নরম গন্ধটা নিতে ইচ্ছে করে।চোখদুটো জড়িয়ে আসছে ওর।ওড়নার বদলে বেডকভারটাকেই টেনে মাথার ওপর দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো এস.আর..