টিউশন থেকে ফেরার সময় কলেজ জীবনের পুরনো এক বড় ভাই এর সাথে দেখা হলো। সেই সময় ভাইয়ার চুল কালার করা সুন্দরী এক প্রেমিকা ছিল।

সেই সময়ে চুল কালার করানো আপু গুলোকে অনেক বড় লোক ভাবা হতো। তো সেই প্রেমিকার সুবাদে ভাইয়াও সবার কাছেই বেশ ভালো পরিচিত ছিলেন।
এতদিন পর দেখে প্রথমে চিনতে পারি নি।
সেই সময় উনার গাল ভর্তি দাঁড়ি ছিল। সবসময় অগোছালো হয়ে চলাফেরা করতেন। এখন বেশ পরিপাটি। ফর্মাল গেটআপে দাঁড়িয়ে আছেন। হয়ত ভালো কোনো পজিশনে আছেন।
উনাকে দেখেই উনার প্রেমিকার কথা জানতে ইচ্ছে হলো খুব।
কাছে গিয়ে আস্তে করে পরে বললাম, "ফিরোজ (ছদ্মনাম) ভাই না?"
আমার দিকে চোখ পিটপিট করে তাকালেন উনি।
এরপর বললেন, "হ্যাঁ। তবে আপনাকে ঠিক চিনতে পারি নি।"
আমি আমার পরিচয় দিলাম।
প্রথমে চিনতে পারলেন না। অনেক ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে চেনাতে হলো। আমাকে চিনার পর বেশ খুশি হলেন তিনি।
এরপর আমাকে নিয়ে হাতের কাছের একটা চায়ের দোকানে গিয়ে বসলেন।
ভাইয়া চায়ের অর্ডার দিলেন।
প্রথমেই ভাইয়া আমাকে আমি কই আছি, কি করছি এসব জিজ্ঞেস করলেন। আমি বললাম। এরপর ভদ্রতার খাতিরে আমিও উনার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলাম।
যা শুনলাম শুনে বেশ ভালোই লাগলো। ভাইয়া বর্তমানে একটা মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে আছেন। বেশ ভালো বেতন পান।
এরপর হালকা ইনিয়ে-বিনিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, "তো ভাইয়া! আপু কেমন আছেন?"
উনি অদ্ভুত এক হাসি দিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, "কোন আপুর কথা বলছো?"
আমি আপুর কথা মনে করিয়ে দিলাম।
এবার ভাইয়া বললেন, "তার খবর রাখি নি। জানি না আমি।"
চুপ করে রইলাম আমি। কি দিয়ে কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না। তারপরও অস্ফুটভাবে মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল, "কেন?"
ভাইয়া লম্বা এক শ্বাস নিয়ে শুরু করলেন, "কলেজে যে সময়ে তোমরা আমাকে দেখেছো তখন আমি অনার্স পড়ুয়া একজন স্টুডেন্ট। সারাদিন রাত পরিশ্রম করে টিউশন করাতাম। ঘরেরে খরচ মিটিয়ে যেখানে নিজের খরচই মেটাতে পারতাম না সেখানে তোমার সেই আপু রিকশায় ঘুরতে চাইতো অথচ লোকাল বাসে চড়া মানুষ আমি। রেস্টুরেন্টে যেতে চাইতো অথচ আমি বাইরে না খেয়ে বিকাল পাঁচটায়ও বাসায় গিয়ে ভাত খেতাম বাইরে খেয়ে পোষাতে পারতাম না বলে।"
এতটুকু বলে ভাইয়ার সামান্য শ্বাস নিলেন।
এরপর আবার শুরু করলেন, "ভেবেছিলাম শুধরে যাবে সে। কিন্তু না! সে পাল্টালো না। বরং ক্লাসলেস অবজ্ঞা দিয়েই আমার সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করেছে সে।"
আমি আস্তে করে জিজ্ঞেস করলাম, "তো ভাইয়া এখনও বিয়ে করেন নি?"
মুচকি হেসে ভাইয়া জবাব দিলেন, " হ্যাঁ, করেছি।"
আবার মিনিট খানেক নিরবতা।
আমার নিরবতা দেখে ভাইয়া বললেন, "জানো অভি! এখন আমার অবস্থা বেশ সচ্ছল। যাকে বিয়ে করেছি তাকে নিয়ে এখন রিকশায় ঘুরতে যেতে বললে কিন্তু সে হাঁটতে চায়। রেস্টুরেন্টে যেতে চাইলে মানা করে দেয়।"
কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে ভাইয়া হেসে বললেন, "বুঝলে! দুনিয়া ভারী অদ্ভুত! কখনও কাউকে ছোট করতে নেই। কখন যে নিজে ছোট হয়ে যাবে টেরও পাবে না। "
এতক্ষণ পর আমি খেয়াল করলাম আমাদের টেবিলে চা ঠাণ্ডা হতে বসেছে। কাপটা তুলে নিয়ে ঠাণ্ডা চা মুখে দিয়ে ভাইয়াকে বললাম, " তাহলে তো ভাইয়া বেশ সফল আপনি।"
কোনো কথা না বলে এক নিমিষে ভাইয়া চা টুকু শেষ করলেন। এরপর বিল মিটিয়ে দিয়ে বাইরে এসে দাঁড়ালেন।
মৃদু হেসে ভাইয়া বললেন,
"সফল তো সেদিনই হয়েছি যেদিন হতে তোমার সেই আপুর বড়লোক স্বামী প্রতিদিন দুইবার করে দাঁড়িয়ে আমাকে সালাম দেয়।"
"সফল তো সেদিনই হয়েছি যেদিন হতে তোমার সেই আপুর বড়লোক স্বামী প্রতিদিন দুইবার করে দাঁড়িয়ে আমাকে সালাম দেয়।"
সময় পাল্টায়!
সাথে প্রতিটা মানুষেরর অবস্থানও পাল্টায়।
সাথে প্রতিটা মানুষেরর অবস্থানও পাল্টায়।
জীবনে ঠেকে উঠা মানুষগুলো এমনি হয়। এদের জবাব গুলো বাকি দশজনের মতো হয় না। জীবনের সংজ্ঞা এদের কাছে অন্যরকম।
এরা যেমন ঘুরে দাঁড়াতে জানে তেমনি দাঁতভাঙ্গা জবাবও দিতে জানে। যেকোনো পরিস্থিতিতে জীবনে ভেঙ্গে না পড়ে সময় নিতে শিখুন!
সময় দিন নিজেকে, ভাবুন আর একটি বার।
অভি মহাজন,