বিয়ের আগে যেসব কথা জানা অনেক জরুরি

ডেস্ক রিপোর্ট : জীবনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে এসে সবাই একজন জীবনসঙ্গী খুঁজে নিয়ে সংসার পাততে চান। তবে বিয়ে মানুষের জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত।

সম্পর্কের শুরুর দিকে সবারই মনে হয় আমার সঙ্গী ঠিক আমার মতো, তার সঙ্গে আমার কত মিল!
দুজন চোখে চোখ রেখে ভালোবাসার মুহূর্তগুলো উপভোগ করতে করতে ভুলেই যান সম্পর্কের এক পর্যায়ে গিয়ে এই মানুষটিকেই মনে হতে পারে সম্পূর্ণ অচেনা।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, যখন মানুষ প্রেমে পড়ে, তখন তার মস্তিষ্কে বয়ে যায় ডোপামিন নামের এক রাসায়নিক পদার্থের বন্যা, যা তাকে খুবই আনন্দিত এবং সুখী অনুভব করায়।
চেনা সঙ্গী যখন অচেনা
প্রেমের শুরুটা এমনই হয়। তখন ভালোবাসার মানুষটির চরিত্রের জটিল দিকগুলো আমাদের চোখে পড়ে না। কিন্তু দুজন মানুষের মধ্যেকার পার্থক্যগুলো উঠে আসে সম্পর্কের বয়স ৬ মাস থেকে দেড় বছরে গড়ালে। প্রথম যেদিন ঝগড়া হয়, সেদিনই মানুষ বুঝতে পারে তার ‘পারফেক্ট’ সঙ্গীটি আসলে ‘পারফেক্ট’ নন, বরং তার মতোই ভুলত্রুটিতে গড়া মানুষ।
বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়ার অর্থ হল কারো সঙ্গে সারাজীবন থাকার পরিকল্পনা করা। জীবনের এই বড় সিদ্ধান্তটি নেয়ার আগে সঙ্গীর সঙ্গে ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলা খুবই প্রয়োজন। তাড়াহুড়া না করে বরং একে অপরকে আরেকটু ভাল করে চেনার জন্য সময় নিলে ভবিষ্যতে মন ভাঙার কষ্ট থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।
প্রশ্ন করুন
সঙ্গীকে প্রশ্ন করুন, যদি আপনারা ভিন্ন ধরনের সামাজিক বা পারিবারিক প্রেক্ষাপট থেকে এসে থাকেন তাহলে এই বিভেদ কিভাবে মেটাবেন? এ ধরনের প্রশ্নগুলো সামনে এলেই সঙ্গীকে নতুন করে জানতে শুরু করবেন আপনি। একে অপরকে সম্পূর্ণরূপে জানা তো একদিনের ব্যাপার নয়, এটি এমন এক প্রক্রিয়া যা সারাজীবন ধরে চলবে।
বর্তমান সময়ে পরিবার গঠনের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টেছে ব্যাপকভাবে, অনেকেই আছেন যারা সন্তান গ্রহণ করতে চান না। অনেক সময়ই দেখা যায়, সন্তানের প্রসঙ্গ আসার পরপরই ভেঙ্গে যায় সুখের সংসার।
বিয়ের আগে এই ধরনের বিষয়গুলো সুরাহা করে না নিলে মধুচন্দ্রিমায় গিয়ে যদি জানতে পারেন সঙ্গীর সঙ্গে আপনার চিন্তাভাবনার ফারাকটা অনেক বেশি, তাহলে কেমন হবে বলুন তো?
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি আপনার সঙ্গী এমন কোনো সিদ্ধান্তে আপনার সঙ্গে একমত পোষণ না করেন, তাহলেই সম্পর্ক ভেঙ্গে ফেলতে হবে এমন কোনো কথা নেই। অনেক সময়ই পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা সঙ্গীর দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিতে পারে, একটু ধৈর্য ধরেই দেখুন না!
প্রশ্নের পরিধি বাড়ান
স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের বিস্তৃতি অনেক বেশি, যার অন্যতম উপাদান হল যৌনজীবন। সঙ্গীকে জিজ্ঞেস করুন, যৌনজীবন নিয়ে আলোচনা করতে কি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তিনি?
যদিও মধুচন্দ্রিমার সময়টুকু স্বামী-স্ত্রী তাদের জীবনের অনেক কিছুর আগাম হিসাবনিকাশ করে নেন, তবে কিছু ব্যাপার আগেই সমাধান করা ভাল। যেমন, সন্তান জন্মের পর প্রথম কয়েক বছর কিভাবে সংসার সামলানো হবে? আজকাল বেশীরভাগ নারীই চাকরিজীবী হয়ে থাকেন, এক্ষেত্রে মা হওয়ার পর চাকরি ছেড়ে সংসার সামলাতে আগ্রহী নাও হতে পারেন কেউ কেউ। তাহলে উপায় কি? সমাধান করে নিন আগেভাগেই।
প্রসঙ্গ যখন টাকাপয়সা
আয় করছেন দুজনেই, তবে অবিবাহিত জীবনের অর্থনৈতিক কাঠামোটা কিন্তু একেবারেই আলাদা। বিয়ের পর যখন সবকিছুই হয়ে উঠবে ‘যৌথ’, সেক্ষেত্রে টাকাপয়সার ভাগাভাগিটা কেমন হবে? দুজনের কি কোনো যৌথ ব্যাংক হিসাব থাকবে? এসব হিসাবনিকাশ বিয়ের আগে করে ফেললে পরে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হবে না।
পরিবার-পরিজন
বাঙালীর রীতি অনুযায়ী যৌথ পরিবারে থাকার চল এখন নেই বললেই চলে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় বিয়ের পর বাবা-মায়ের কাছ থেকে আলাদা হয়ে নিজেদের ছোট্ট সংসার পাতেন নতুন দম্পতি। তবে উভয় পক্ষের বাবা-মায়ের প্রতি দায়িত্ব কিন্তু থেকেই যায়।
শ্বশুরবাড়ির প্রতি দুজনের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন তা নিশ্চিত করে নিন এখনই। পুত্রবধূ কিংবা মেয়ের জামাই হিসেবে কতটা দায়িত্ব আপনি পালন করতে আগ্রহী তা সঙ্গীকে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে রাখুন। বিয়ের পরে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা কতখানি রাখতে চান তাও আলোচনা করুন।
মনে রাখবেন
দুজনের মতামতে ভিন্নতা থাকা মানেই সম্পর্কের ইতি নয়, বরং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে পারস্পরিক বোঝাপড়া ভাল থাকলে সম্পর্ক আরো মজবুত এবং গভীর হয়। বিয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সঙ্গীকে আরো ভাল করে জানার চেষ্টা করুন, প্রয়োজনে সময় নিন।