ঝরা ফুলের বাসর


 

দরজাটা খোলা রেখে জামাটা চেঞ্জ করছিলাম। পেছনের থেকে কারও হাসির কন্ঠস্বর শুনতে পেয়ে ঘুরে তাকিয়ে হৃদ ভাইয়াকে দেখতে পেলাম।দরজার কোণ ঘেঁষে শরীর এলিয়ে দিয়ে উল্টো ঘুরে দাড়িয়ে আছে সে।আর আমি লজ্জায় মাথাটা নিচু করে আছি।কিছুক্ষণ পর যখন বুঝতে পারলাম ফোনে কথা বলে হাসছে সে।তখন একটা স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে রুমের আলোটা নিভিয়ে দিলাম।জামাটা হাতিয়ে নিয়ে পেছনে ঘুরতে যাবো অমনি ভারি কিছুর সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে যেতে নিলাম।এমন সময় কেউ আমার কোমড়টা চেপে ধরলো।আর আমি জমে একদম শক্ত হয়ে রইলাম।কিচ্ছু বললাম না।তার নিশ্বাসগুলো পরছে একদম আমার বুকে।কোমড় থেকে উঠিয়ে হাতটা হালকা একটু উপরে আনতেই আমি ঠেলে কিছুটা দূরে সরিয়ে দিলাম তাকে।সে বলে উঠলো, -আচ্ছা ফুল এতো খালি খালি লাগছে কেন? তুই কি এখন মর্ডাণ মেয়েদের মতোন ছোট ছোট কাপড় পরা শুরু করেছিস নাকি? সো ব্যাড ফুল।এটা কিন্তু একটুও আশা করিনি তোর থেকে। হৃদ ভাইয়ার মুখে এমন কথা শুনে আমি চুপসে রইলাম।মনে মনে ভাবতে লাগলাম কি বলছে এসব হৃদ ভাইয়া?

 

 সুযোগ বুঝে জামাটাও একটানে গলাতে ঢুকিয়ে দিলাম।অন্ধকারে উল্টো জামা পরে লাইটটা অন করলে আমাকে টেনে ঘুরিয়ে নিলেন নিজের দিকে।আমার মুখের দিকে অপলক তাকিয়ে আছে হৃদ ভাইয়া।বাতাসে উড়তে থাকা চুলগুলো কানে গুজে দিয়ে আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার ভালো করে দেখে নিয়ে বললেন, -না তো! তুই একটুও মর্ডাণ হোস নি। কত্ত কিউট লাগছে তোকে।উম্ম..ম্ম.. বলেই থেমে গেলো।আমাকে ছেড়ে দিয়ে দূরে এসে দাড়িয়ে রইলো। আমি ভ্রু উঁচিয়ে জানতে চাইলাম, -উম্ম..ম্ম কি? -কিছু না। আমি বিস্ময় নিয়ে আবারও জানতে চাইলাম, -কিছু না মানেটা আবার কি? হৃদ ভাইয়া এদিক ওদিক তাকিয়ে আমাকে ঘুরিয়ে আয়নার সামনে এনে দাড় করালেন।আঙুল উঁচিয়ে চোখের ইশারায় সামনের দিকে দেখিয়ে বললেন, -বারো বছর আগে তো এমন উল্টো জামা পরতি না। কথাটা শুনে চোখ তুলে আয়নাতে নিজেকে দেখে বুঝতে পারলাম আমি সত্যি অন্ধকারে জামাটা উল্টো পরে ফেলেছি।লজ্জায় আর কিছু না বলে ছুটে ঢুকে গেলাম ওয়াশরুমে। ওহহো আমার কপালটাই খারাপ।যা করতে যায় তাই উল্টো হয়ে যায়।এতো বছর পর হৃদ ভাইয়া ডাক্তার হয়ে দেশে ফিরবেন বলে কাকিমা অনেক বড় একটা পার্টির আয়োজন করেছেন আজকে।খুব সুন্দর একটা ড্রেসও দিয়েছেন আমাকে।আমার ফুটো কপাল যে একটা কাজও ঠিকভাবে করতে পারি না।ওদিকে নূর আপু! সব কাজ পার্ফেক্টভাবে করে। -কিরে ফুল হলো তোর? ওইযে নূর আপু এসে গেছে।আর আমি এখনও সাজতেও পারলাম না।এইতো এখনো সেই কথাই বলে চলেছি।উল্টো জামা পরে। -এই মেয়ে এই দরজাটা খুলবি? যাবি না তুই? দেরি হয়ে যাবে তো। দরজাটা খুলে বললাম আমি, -আপু এতো চিৎকার করো না।দেখছো তো আমি রেডি হচ্ছি।আর একটু সময় দাও আমি আসছি। আপু আমার কান টেনে ধরে বলে উঠলো, -উল্টো জামা পরে যাওয়ার প্লান করেছিস নাকি? আপুকে রুম থেকে বের করে দিয়ে দরজাটা লক করে বললাম, ঝরা ফুলের বাসর -যাও না আপু আমি আসছি। তাড়াহুড়ো করে জামাটা ঠিক ভাবে পরে। ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক দিয়ে এসে দেখি পার্টির দৃশ্যই পাল্টে গেছে।এমন ডেকোরেশন বাভাগো জীবনেও দেখিনি।কত্তসুন্দর বড় বড় লাইট বসিয়েছে সারা বাড়িতে।খাবারের আইটেম গুলোও আমার পছন্দের মেনু।উরে আম্মা চকোলেটও আছে দেখি।ছোট বড় কত রকমের চকোলেট।এতো খুশি লাগছে যে কি বলবো।মনে হচ্ছে এই পার্টি আমার।যাক সবাই পার্টি করুক।আমি গিয়ে চকোলেটগুলো সাভার করিগে।

নরম নরম সব আমার পছন্দের ফেভারের চকোলেট।খেয়ে সারা মুখ ভাসিয়েছি।হালকা ঝিকিমিকি আলোয় ডিজে সঙগে ড্যান্স করছে সবাই।হঠাৎ আমার সামনে এসে কেউ বসে পরলো।অন্ধকারে আবছা আলোয় মুখটাও দেখতে পারছি না।চোখদুটো হাত দিয়ে টেনে বড় করে মুখটা এগিয়ে দেখতে গেলে আমার চুলের ভাজে হাত ডুবিয়ে দিলো।হালকা আলো এসে পরলো তার মুখে।দেখতে পেলাম হৃদ ভাইয়ার মুখটা।আমি কিছু বলতে যাবো আমার ঠোঁটদুটো নিজের দুই ঠোঁটের মাঝে আবন্ধ করে ফেললো সে।আমার মুখে লেগে থাকা চকোলেট চুষে খেয়ে নিয়ে চোখের দিকে আগালো।মুচকি হেসে আস্তে করে বলল, ঝরা ফুলের বাসর
-হাত দিয়ে চোখ টেনে ধরেছিলি।তোর চোখেও চকোলেট লেগে আছে।
সঙ্গে সঙ্গে এক ধাক্কায় দূরে সরিয়ে দিয়ে হৃদ ভাইয়ের গালে বসিয়ে দিলাম এক চড়!
শার্টের কলারটা টেনে ধরে ঝাকিয়ে বললাম আমি, ঝরা ফুলের বাসর
-আপনি না ডাক্তার? আপনার চরিত্র এতো খারাপ? এতোটা নিচ মানুষিকতা? আমাকে আপনি….কি করে? ছিঃ
আমি মুখ ঘুরিয়ে নিতেই গালটা ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বললেন আমায়,

-ফুল আমার কথাটা একবার বলতে দে।
আমি নিজের স্বর্ব শক্তিটুকু দিয়ে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে বললাম, ঝরা ফুলের বাসর
-ঘৃণা হচ্ছে আমার আপনাকে দেখলেই। আর কখন আমার সামনে আসবেন না।
ছুটে আমি নিজের রুমে চলে এসে দরজাটা ভেতর থেকে লক করে দিলাম।আয়নার সামনে দাড়িয়ে টিস্যু দিয়ে নিজের মুখ মুছতে লাগলাম।আর দুনিয়ায় যতো গালি আছে সব দিতে থাকলাম।কিছুক্ষণ পর দরজায় নক পরতেই পানির জগটা উঠিয়ে নিয়ে দরজা খুলেই মারলাম ছুড়ে।সম্পূর্ণ পানিটা এসে পরলো নূর আপুর মুখের উপর।
চলবে,,,